পাতা:নির্বাসিতের আত্মকথা - উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\სტ8 নির্বাসিতের আত্মকথা মনের মধ্যে স্পষ্টই জাগিয়া রহিয়াছে; জীবনের বাকি কয়টা দিনও কা থাকিবে । জীবনে অনেক সাধুসন্ন্যাসী দেখিয়াছি ; কানাইএর মত আমন প্ৰশান্ত মুখচ্ছবি আর বড় একটা দেখি নাই। সে মুখে চিন্তার রেখা নাই, বিষাদের ছায়া নাই, চাঞ্চল্যের লেশ মাত্র নাই-প্ৰফুল্ল কমলের মত তাহা যেন আপনার আনন্দে আপনি ফুটিয়া রহিয়াছে। চিত্ৰকূটে ঘুরিবার সময় এক সাধুর কাছে শুনিয়াছিলাম যে, জীবন ও মৃত্যু যাহার কাছে তুল্যমূল্য হইয়া গিয়াছে সেই পরমহংস। কানাইকে দেখিয়া সেই কথা মনে পড়িয়া গেল। জগতে যাহা সনাতন, যাহা সত্য, তাহাই যেন কোন শুভ মুহূৰ্ত্তে আসিয়া তাহার কাছে ধরা দিয়াছে।--আর এই জেল, প্রহরী, ফাঁসিকাঠ, সবটাই মিথ্যা, সবটাই স্বপ্ন ! প্রহরীর নিকট শুনিলাম ফাঁসির আদেশ শুনিবার পর তাহার ওজন ১৬ পাউণ্ড বাড়িয়া গিয়াছে!! ঘুরিয়া ফিরিয়া শুধু এই কথাই মনে হইতে লাগিল যে, চিত্তবৃত্তিনিরোধের এমন পথও আছে যাহা পতঞ্জলিও বাহির করিয়া যান নাই। ভগবানও অনন্ত, আর মানুষের মধ্যে র্তাহার লীলাও অনন্ত ! তাহার পর একদিন প্ৰভাতে কানাইলালের ফাঁসি হইয়া গেল। ইংরাজশাসিত ভারতে তাহার স্থান হইল না। না হইবারই কথা ! কিন্তু ফাঁসির সময় তাহার নির্ভীক, প্ৰশান্ত ও হাস্যময় মুখশ্ৰী দেখিয়া জেলের কর্তৃপক্ষীরা বেশ একটু ভ্যাবাচক হইয়া গেলেন। একজন ইউরোপীয় প্রহরী আসিয়া চুপি চুপি বারীনকে জিজ্ঞাসা করিল— “তােমাদের হাতে এ রকম ছেলে আর কতগুলি আছে?” যে উন্মত্ত জনসজন্য কালীঘাটের শ্মশানে কানাইলালের চিতার উপর পুষ্প, বর্ষণ করিতে চুটিয়া আসিল, তাহারাই প্রমাণ করিয়া দিল যে, কানাইশীল মরিয়াও মরে নাই। কিছুদিন কুঠরীতে বদ্ধ থাকিবার পরে আলিপুরের জজের আদালতে