দিকে আশ্চর্য হয়ে চেয়ে রইল কতক্ষণ। সে বোধ হয় বুঝতে পেরেছিল আমার হাঁটতে কষ্ট হচ্চে। সে চেঁচিয়ে বললে—আজ এখানে থেকে গেলেই পারতে—হ্যাঁগো?
আমি ঘাড় নেড়ে বললাম—না, আমাকে যেতেই হবে; মার জন্যে মন কেমন করচে!
আবার মাঠ। কি সুন্দর মাঠ! শুধু আকন্দ ফুল আর ঘেঁটুফুল ফুটে আছে। যদি শরীর ভালো থাকতো, হয়তো মাঠে হাডুডু খেলতাম বন্ধুদের নিয়ে। সূর্য অস্ত যাচ্চে। এখনো সামনে চিল্তেমারি গ্রাম, তারপর কেউটেপাড়ার খেয়াঘাট—যমুনা নদীর ওপর। সন্ধ্যে হলেই আমার ভয় করবে। চিল্তেমারির শ্মশান তার আগেই পেছনে ফেলতে হবে; কিন্তু আর যেন হাঁটতে পারচিনে! শরীর কেমন করছে।
একটা তুঁতগাছের তলায় গুঁড়ি ঠেস্ দিয়ে বসে দম নিই। সূর্যটার দিকে চেয়ে চেয়ে দেখি। সূর্য ডুবলেই অন্ধকার হয় না। ভরসা একেবারে ছাড়িনি। আচ্ছা, এই তুঁততলায় যদি আর খানিকটা বসি? না, তা হলে কেউটেপাড়ার খেয়াঘাটে পৌঁছতে পারবো না। আবার জ্বর আসবে নাকি? শীত করচে আবার।
এক দাগ ওষুধ পকেট থেকে বের করে নাক টিপে খেয়ে নিলাম। বিকট তেতো কুইনিন্ মিক্চার। মা সুপুরি কেটে দেবে বাড়িতে, তখন শুধু মুখে আর ওষুধ খেতে হবে না। চিল্তেমারি ছাড়লাম প্রাণের দায়ে জোর হেঁটে। শ্মশান-রাস্তার বাঁ-দিকে তেলাকুচো আর সোয়াদি গাছের নিবিড় ঝোপে অন্ধকার হয়ে আসচে। আড়চোখে একবার চেয়ে দেখে সন্তর্পণে রাস্তা পার হয়ে যাচ্চি।
কে যেন বলে উঠলো, পারবিনে তুই মায়ের কাছে যেতে। আমরা তোকে যেতে দেবো না। তোকে এই শ্মশানেই রাখবো।
দূর, ওসব মনের ভুল। রাম রাম, রাম, রাম! এখনো অন্ধকার
৯৪