বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমার ছাত্র

 মানুষের প্রতি মানুষের এই যে হিংসা, এই যে উলঙ্গ বর্বরতা আচরিত হচ্চে সভ্যতার নামে, শত বৎসরের শিক্ষা সংযম এক মুহূর্তে যাতে করে তৃণের মত উড়ে গেল, উদগ্র লোভ, হিংসা ও লালসার এই যে নগ্ন মূর্তি দেখা গেল চোখে,—তাতে দমে গেলে চলবে না। মানুষ আছে এখনও, মানবতা আছে, মনুষ্য সমাজ থেকে লজ্জায় মুখ ঢেকে বিদায় নেবার সময় ভগবান এদেরই দিকে ফিরে ক্ষীণ আশ্বাসের বাণী শুনতে পান, শুনতে পেয়ে থম্‌কে দাঁড়ান।

 আমাদের গণেশদাদার কথা বলবার যোগ্য বলে এতদিন ভাবতামই না, কিন্তু আজ দেখচি গণেশদাদার ছবি আমার মনের পটে মস্ত বড় হয়ে ফুটে উঠেছে। এর আর একটা কারণ যে গণেশদাদা আমার ছাত্র।

 গণেশদাদার নাম গণশা মুচি। আমাদের গ্রামের মুচিপাড়ার ছোট্ট খড়ের চারচালা ঘরে দুটি গরু ও চার-পাঁচটি বাছুর এবং স্ত্রীপুত্র নিয়ে, উঠানে লাউমাচা পুঁইমাচা বানিয়ে, পুন্‌কে নটে শাক বুনে, মেটে আলু ও বুনো ওল তুলে হাটে বিক্রি করে সংসার চালাতো।

 যখন পাঠশালায় পড়ি, তখন হরিশ জ্যাঠামশায়ের বাড়ি গণেশ মুচি কৃষাণের কাজ করে। আমরা গণেশদাদা বলে ডাকতাম, অন্যলোকে বলতো গণশা মুচি। মিশ্‌কালো, দোহারা গড়ন, মুখে একপ্রকার শান্ত, দীন ভাব, লাজুক-নম্র চোখ দুটি, সর্বদাই যেন অপ্রতিভ, যেন কি একটা মহা অপরাধ করে ফেলেচে সে।

 হরিশ জ্যাঠামশায় কড়া প্রকৃতির গ্রাম্য গাঁতিদার। গণেশদাদাকে

১০৫