এই আমার ইচ্ছা। আমার উদ্দেশ্য সফল হোল; শহরে বাবুরা ওর দিকে চেয়ে চেয়ে বললে—বাঃ, বাঃ, এ লোকটি তো বেশ। কি নাম তোমার? বেশ। এদিকে এসো—
ওরা চার আনা বকশিস করলে তখুনি। অর্থকরী বিদ্যা বটে ইংরিজি।...
সেই থেকে গণেশদাদার কি উৎসাহ ইংরিজি শেখাবার। সাতদিনের মধ্যে আর এক ডজন শব্দ কণ্ঠস্থ করে ফেললে।
আর একদিনের কথা মনে পড়ে। শীতকাল। বাড়িতে রুটি হচ্চে, দুধ আর গুড় দিয়ে খাবো বলে মনে খুব ফুর্তি। এমন সময় পীতাম্বর রায় জ্যাঠামশায়দের বাড়ি হৈ চৈ শুনে সেদিকে গেলাম। গিয়ে দেখি তার চণ্ডীমণ্ডপের সামনে লোকে লোকারণ্য। পীতাম্বর রায়, হরিশ জ্যাঠামশায়, নবীন চক্রবর্তী প্রভৃতি বিশিষ্ট ভদ্রলোকেরা চণ্ডীমণ্ডপে বসে। পীতাম্বর রায় খুব চীৎকার করচেন ও হাত-পা নাড়চেন। উঠানের মাঝখানে গণেশদাদা মুখ চুন করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ব্যাপার শুনে বুঝলাম, পীতাম্বর রায়ের একটি গরু আজ দুদিন হারিয়ে গিয়েছিল, আজ সেটা গণেশদাদার বাড়ির পিছনে মুচিপাড়ার বড় আমবাগানে (যার নাম এ গ্রামে গলায় দড়ির বাগান) লতা দিয়ে বাঁধা ছিল এবং তার লেজ কে দা দিয়ে অনেকখানি কেটে দিয়েছে, ঝরঝর করে রক্ত পড়চে লেজ দিয়ে। এই অপরাধের সন্দেহ গিয়ে পড়েছে গণেশদাদার ওপর, কারণ প্রথমতঃ মুচিরা গরুর চামড়া বিক্রি করে, দ্বিতীয়তঃ গরু গণেশদাদার বাড়ির পিছনে বাঁধা ছিল, তৃতীয়তঃ গণেশদাদা গরীব। সুতরাং গণেশদাদাই রাত্রে গরুটি কেটে চামড়া খুলে নেওয়ার উদ্দেশ্যে সেটাকে লুকিয়ে রেখেছিল তার বাড়ির পিছনের আমবাগানে। দায়ের কোপও সেই মেরেচে।
পীতাম্বর রায়ের ও হরিশ জ্যাঠামশায়ের যুক্তির মধ্যে যে ফাঁক ছিল, তা কারো চোখে পড়লো না। গণেশদাদার বক্তব্য প্রথমতঃ
১০৮