ওর অবস্থা এত খারাপ হোল কেন? কারণ শুনলাম ওর দুই ছেলেই মারা গিয়েচে। বুড়ো হয়েচে বলে লোকের বাড়িতে কৃষাণের কাজে কেউ রাখতে চায় না। জমিদারের দেনার দায়ে সামান্য একটু ভিটেসংলগ্ন জমি ছিল, তাও বিক্রি হয়ে গিয়েচে। নিজের লাঙল নেই বলে ভাগে চাষ করবার উপায় নেই—যার লাঙল নেই, তাকে বর্গা দেবে কে জমি? সুতরাং এ-বয়েসে বাধ্য হয়েই ওকে গরু চরাতে হচ্চে।
গণেশদাদার বাড়ি গেলাম একদিন। ও বসে বসে কঞ্চি চাঁচচে—ঝুড়ি বুনবে। ঝুড়ি তৈরি করে হাটে বেচলে পয়সা হয়, কিন্তু ও ঝুড়ি বুন্চে পরের ব্যাগার। এ আমি জানি। এর একটা মস্ত কারণ, ওকে পরের বাঁশঝাড় থেকে কঞ্চি কেটে আনতে হয়—অপরে তার দামস্বরূপ নেয় একটা ঝুড়ি, না তো একটা গাছ-ঘেরা কঞ্চির ঠোঙা। গণেশদাদার ঘরে কঞ্চির ঝাঁপের বেড়া, চালে খড় নেই—একটা চালকুমড়ো লতা উঠিয়ে দিয়েচে চালে, চালকুমড়োর ফুল আর ফল যথেষ্ট হয়েছে, লতাগুলো চাল ছাড়িয়ে এদিক ওদিক ঝুলে পড়ে বাতাসে দুলচে, একটা ধাড়ি ছাগল ঘরের ছেঁচতলায় কাঁঠাল পাতা পরম তৃপ্তিতে চর্বণ করছে, ওর বৌ গৃহকর্ম করচে—বেশ লাগল আমার। ঘরে পেতল কাঁসার সংস্পর্শ নেই—মাটির কলসী, মাটির হাঁড়ি সরা, মাটির ডাবর, মাটির ভাঁড়ে জল রাখা আছে। ভাত খায় কলার পাতায় নয়তো চাম্টার বিলের পদ্মপাতায়। আমাকে বললে—চালকুমড়ো একটা নিয়ে যাও দাদাঠাকুর।
—ও আমি কি করবো?
—নিয়ে যাও, বেশ সুক্তুনি করো তোমরা। মোরা সুক্তুনি রাঁধতে জানিনে। বামুন-বাড়িতে কত সুক্তুনি খেইচি আগে আগে! পস্কার লাগে—
—কেন, বউদিদি সুক্তুনি করতে জানে না?
—অত তেল মসলা কনে পাবো মোরা? দাদাঠাকুরের য্যামন কথা। ও সব তরকারি কি মোরা খেতি জানি, না পারি?
১১৫