তিনি পকেট হইতে টাকা বাহির করিয়া নাম রেজেষ্ট্রি করিলেন। ডাক্তারবাবু রসিদ কাটিয়া দিলেন দেখিলাম। লোকটির সঙ্গে আরো কি কথা হইয়াছে জানি না, দুটাকা দিয়া রসিদ লইয়া লোকটা চলিয়া গেল।
আমাকে ডাক্তারবাবু বলিলেন—জমি দেখবেন? আচ্ছা, চলুন আমিই যাচ্ছি।
পরে আমাকে দুর্গন্ধময় জল ভর্তি নালা, কচুবন, ভাঙা চালাঘর প্রভৃতির পাশ দিয়া কোথায় কোন্ অনির্দেশ্য রহস্যের দিকে লইয়া যাইতে লাগিলেন, তিনিই জানেন।
আমি একবার ক্ষীণ প্রতিবাদ করিবার চেষ্টা করিলাম। তিনি বোধ হয় ভুলিয়া যাইতেছেন, এ জায়গাটি ষ্টেশনের খুব কাছে। ষ্টেশনের সংলগ্ন বলিয়া বিজ্ঞাপনে আছে—
ডাক্তারবাবু আমার দিকে কটমট দৃষ্টিতে চাহিয়া বলিলেন—আপনার তো আইডিয়া দেখছি বেশ। ষ্টেশন-সংলগ্ন মানে কি একেবারে কোন্নগর ইষ্টিশানের টিকিটঘরের পাশে হবে মশাই?
বলিতে পারিতাম, ‘সংলগ্ন’ বলিতে দুই মাইল দূরবর্তীই কি বোঝায়? কিন্তু না, দরকার নাই। পূর্ববঙ্গের অসহায় হিন্দু আমি, এখানকার জমির মালিকের সঙ্গে অনর্থক ঝগড়া করিব না। স্থান পাওয়া লইয়া কথা। চটিয়া গেলে জমি না দিতেও তো পারে।
বিনীতভাবে বলিলাম—কলোনি কতদূর?
—মাইলখানেক দূরে।
বিস্মিত হইয়া বলিলাম—বলেন কি! তবে সাড়ে-তিন মাইল দূর পড়লো ষ্টেশন থেকে। এর নাম ‘সংলগ্ন’? এ তো কখনো শুনিনি—
ডাক্তারবাবু থমকিয়া দাড়াইয়া গেলেন। বলিলেন—না শুনেচেন কি করবো? কিন্তু আপনাকে বলচি, কলোনির এক ইঞ্চি জমি পড়ে থাকবে না। সব নামে-নামে রেজেষ্ট্রি হয়ে যাচ্চে। আপনার ইচ্ছে হয়, না নেবেন। তবে কি দেখতে যাবেন, না, দেখবেন না?
৮