বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 সব শুনিয়া হরিশ বাবু মুকুন্দ কলুকে ধমক দিয়া কিঞ্চিৎ সদুপদেশ দিলেন। সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা! তাহার মত ট্যানাপরা লোকের পক্ষে? যাক্, যাহা হইবার হইয়াছে, সাহেব, নিজগুণে এবারটি গরীবকে মাপ করিয়া দিন।

 সাহেবকে হরিশ বাবু জিজ্ঞাসা করিলেন—আজ বুঝি ডিক্রির দিন?

 —নিশ্চয়। ও এতদিন আমার সঙ্গে একটা কথা কইতো না। আজ একেবারে পায়ে ধরেছে।

 ষড়ানন বক্‌সি বলিল—শুধু পায়ে ধরা নয় একেবারে মড়াকান্না কেঁদে লোক জড়ো করে ফেলেছে—

 সাহেব জনতার উদ্দেশ্যে বলিলেন—এই, যাও সব এখান থেকে। এখানে কি? চলে যাও সব—

 হরিশ বাবু উকিলও সেই সঙ্গে যোগ দিয়া বলিলেন——হ্যাঁ, তোমরা কেন এখানে বাপু? কাছারির সামনে ভিড় কোরো না—হাকিম চটবেন——যাও এখন—এখানে কি ঠাকুর উঠেছে?

 হিসাব করিয়া ষড়ানন বক্‌সি সাহেবকে জানাইল, এই মামলায় এ পর্যন্ত সাতশো সাড়ে সাতশো টাকা খরচ হইয়া গিয়াছে।

 সাহেব বলিলেন—আচ্ছা যা, মাপ করলাম। নায়েব বাবু মামলা মিটিয়ে নেবেন।

 ষড়ানন বক্‌সি বলিল—খরচার টাকা?

 —ওর সঙ্গে না হয় ষড় করে নেবেন। তবে বলে দিন আমার কুঠীতে গিয়ে নাকে খত দিতে হবে ওকে। নইলি আমি ওকে ছাড়বো না। ও নাকে খত দিতে রাজি কিনা?

 মুকুন্দ বিশ্বাস খুব রাজি। সে এখনি নাকে খত দিতে প্রস্তুত আছে। সাহেবের আশ্বাস পাইয়া সে চলিয়া গেল।

 সেবার শীতকালের মাঝামাঝি মিসেস্‌ ফালমন্ লিভারের অসুখে ভুগিয়া কলিকাতার হাসপাতালে মারা গেলেন। দিন সাতেক পরে