গিরিবালা বললে—বাবা, একটু পড়ে আমায় শোনাবেন? আমি একখানা বই এনেচি।
—কি বই দেখি?
—আপনার বাড়িতেই বইখানা থাক। মাঝে মাঝে এসে শুনে যাবো। বড় ভালো বই বাবা। তা আমি তো লেখাপড়া জানিনে—
বইখানা উল্টে-পাল্টে দেখলাম। বইখানা অত্যন্ত পুরনো, নাম “সাধনতত্ত্ব ও জীবমুক্তি”। লেখকের নাম শ্রীমৎ ওঁকারানন্দ সরস্বতী, প্রাপ্তিস্থান সাধন আশ্রম, গ্রাম সারাড়িতলা, জেলা পুরুলিয়া, মানভূম। এসব ধরনের বইয়ের ওপর আমার কোনো কালে শ্রদ্ধা নেই, তবুও গিরিবালার মনস্তুষ্টির জন্যে পাতার পর পাতা অত্যন্ত কঠিন সেকেলে বাংলায় লেখা সেই তত্ত্বকথা আমাকে গড় গড় করে পড়ে যেতে হোল।
গিরিবালা মাঝে মাঝে হয়তো প্রশ্ন করে—হ্যাঁ বাবা, তাহোলে জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার সম্পর্কটা কি বলচে?
আমি আবার আগের পাতা থেকে পড়ে যাই। যা বুঝতে পারি ওকে বুঝিয়ে বলি। প্রত্যেক পাতা শেষ হওয়ার পর ভাবি এইবার কি একটা ছুতো করে উঠে পড়া যায়।
ঘণ্টাখানেক এভাবেই কেটে যাওয়ার পরে গ্রামের দু’জন লোক হঠাৎ এসে পড়াতে ধর্মালোচনার আসর ভেঙ্গে গেল। গিরিবালা যাবার সময় বইখানা আমার কাছে রেখে গেল। আবার একদিন যত শীগগির হয় ও আসবে ‘সাধন তত্ত্ব’ শুনতে। আমার স্ত্রী বললেন—ও তোমার কাছে রোজ রোজ আসে কেন? ও আপদকে রোজ রোজ আসতে দিও না।
—তুমি জানো না। গিরিবালা আগে যেমনই থাক, এখন ওর পরিবর্তন এসেচে বলেই মনে হয়।
—তা হোক গে। ও সব লোক কখনো ভালো হয় না। দরকার কি ওর এখানে আসবার?
৪৯