এবার কিন্তু গিরিবালা যখন এল, তখন সকলের আগে আমার স্ত্রীকে গিয়ে সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত করলে। অনেকক্ষণ ধরে কি সব গল্পগুজব করলে। তারপর বাইরে এসে আমার সামনে বসলো, তাকে ‘সাধন তত্ত্ব’ পড়ে শোনাতে হোল ঝাড়া দু’ঘণ্টা। ইতিমধ্যে বাড়ির মধ্যে চা খেতে গেলে গৃহিণী বললেন—গিরিবালা কি চলে গেল?
—না। বাইরে বসে আছে, সাধনতত্ত্ব শুনবে।
—যাবার সময় যেন এবেলা এখানে খেয়ে যায়।
—কেন, হঠাৎ তার ওপরে এত প্রসন্ন?
—জানো না, সে এক গাদা ফুলবড়ি নিয়ে এসেচে। তিনখানা আমসত্ত্ব আর অনেকখানি আমের আচার। আমি বললাম আমি নেবো না। এ তুমি নিয়ে যাও। সে আমার হাতে ধরে জোর করে দিয়ে বললে—এ নিতেই হবে। ব্রাহ্মণের সেবার জন্য এনেচি, ফিরিয়ে নিয়ে যাবো কি ব’লে?—ওকে এ বেলা খাইয়ে দিতে হবে।
—বেশ। বলচি আমি।
গিরিবালাকে গিয়ে বলতে সে ভারি খুশি হোল। এক গাল হেসে বললে—মায়ের হাতে রান্না পেসাদ পাবে। এ কি আমার কম ভাগ্যি? বৃন্দাবনে একবার—
—ভালো কথা, বৃন্দাবনে তোমার কি হয়েছিল সেদিন বলছিলে?
গিরিবালার মুখে হঠাৎ যেন ভক্তি ও দীনতার ভাব ফুটে উঠলো। হাত জোড় করে বললে—ঠাকুর যদি কৃপা করেন, তবে মরুভূমিতে ফুল ফোটাতে পারেন—
—নিশ্চয়ই।
—আমি তবে বলি শুনুন, আমি কত সামান্য মানুষ আপনি তা জানেন। বৃন্দাবন গিয়ে গুপীনাথের ঘেরা বলে জায়গায় আমাদের গাঁয়ের রসিক পরামাণিকের বাসায় উঠলাম। গঞ্জের রসিক পরামাণিক সেখানে অনেকদিন থেকে কাপড়ের ব্যবসা করচে জানেন তো?
৫০