পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দীর্ঘাকৃতির সঠিক পরিচয় পাওয়া যায় না। আমাদের চান্সারীগলির কার্যালয়ে স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের সময়ে আমি তাঁকে ভাল করে দেখলাম। তাঁর হাসির এমন এক যাদু আছে যার বিরুদ্ধে কোন রকম বিরোধিতা টিঁকতে পারে না।···

জুলাই ৯, ১৯৪৩

 আজ এক বিরাট জনসমাগম। লক্ষ লক্ষ লোক নেতাজীর বক্তৃতা শুনতে জড় হয়েছে—প্রকৃতই শুধু মাথার সমুদ্র। দুরন্ত উত্তেজনা! সত্যিই নেতাজী যেভাবে জনসাধারণের সঙ্গে ব্যবহার করেন তার মধ্যে এক অপূর্ব স্নেহের স্বাদ আছে। বিশেষ করে স্ত্রীলোকও শিশুদের প্রতি তিনি বিশেষ যত্নশীল। এমন কি তাঁকে দেখবার জন্যে কিংবা স্পর্শ করবার জন্যে যখন জনতা হুড়োহুডি করতে লেগে যায় তখনও তিনি একটুও রূঢ় ব্যবহার করেন না। গতকাল তিনি আমাদের কার্যালয় পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। একটি বৃদ্ধা মহিলা দরজার কাছে তাঁর পদস্পর্শ করতে চেষ্টা করেন। তিনি তাঁকে হাতে ধরে তুলে মাথা পেতে আশীর্বাদ প্রার্থনা করলেন। বল্লেন—‘মা’! পরবর্তীকালে তিনি যখন কোলকাতায় ফেলে আসা স্নেহশীলা মায়ের কথা বর্ণনা করেছিলেন তখন আমাদের চোখে জল এসে গিয়েছিল।

 মাইকের সামনে যখন তিনি বক্তৃতা করেন তখন নেতাজী ঋজু দৃঢ় ভঙ্গীতে দাঁড়ান। তাঁর কোনরকম অস্বাভাবিক বক্তাসুলভ বাচলতা নেই। খুব কমই অঙ্গভঙ্গী করেন। গম্ভীর, ধীর অথচ দৃঢ় ভাষায় তিনি শুধু যুক্তির পর যুক্তি দিয়ে চলেন। শ্রোতাদের মধ্যে প্রত্যেক স্ত্রী ও পুরুষ মনে করে যেন বিশেষ করে তাকেই কথাগুলো বলছেন। কোনওরকম নাটুকে ভঙ্গী তাঁর মধ্যে নেই। এক চুমুকও জল খেতে হয়না কাউকে হাওয়া করতে হয় না···কোন লেখা থেকে স্মৃতি সঞ্চয় করতে হয় না— কোনও রকম কাগজপত্রের বালাই নেই। মনে হবে তোমার বাবা বুঝি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে তোমার মঙ্গলের জন্যে আবেদন করছেন জোরের সঙ্গে যুক্তি দিয়ে তোমাকে আচ্ছন্ন করছেন···।

১৫২