পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ইতিহাসে সে এক অভাবনীয় অধ্যায়। এই সব আশঙ্কা করেই বাঙ্গলা সরকার প্রথমে সুভাষবাবুকে এই পদে নিযুক্ত করতে চান নি। কিন্তু পরে জনসাধারণের ইচ্ছার চাপে করতে বাধ্য হন। যাই হোক সুভাষবাবু অভূতপূর্ব জনপ্রিয়তা অর্জন করলেন।

 কিন্তু বাঙ্গালীর দুর্ভাগ্য যে বেশীদিন তারা সুভাষবাবুকে তাদের মধ্যে আর পেলে না। সুভাষবাবু সরকারের কোপদৃষ্টিতে পড়লেন। পড়া স্বাভাবিক কেন না দেশের এই সর্ববিধ উন্নতির চেষ্টা সহ্য করা আমাদের ইংরাজ শাসকদের ধর্ম নয়। তাই ২৫শে অক্টোবর ভোরবেলা অতর্কিতে পুলিশে সুভাষবাবুর বাড়ী ঘেরাও করলে। এবং তিনি স্পেশ্যাল অডিনান্সের বলে গ্রেপ্তার হলেন।

 দেশময় তুমুল আন্দোলন চললো। দেশবন্ধু কর্পোরেশনের তরফ থেকে প্রতিবাদ জানাতে লাগলেন। তিনি ঘোষণা করলেন বিনা বিচারে এমনিভাবে আটক রাখা সম্পূর্ণ বেআইনী। দেশশুদ্ধ লোক তাকে সমর্থন করতে লাগলো বিক্ষোভ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। এদিকে ষ্টেটম্যান আর ইংলিশম্যান এই দুখানা শ্বেতাঙ্গ-মুখপত্র সুভাষবাবুর বিরুদ্ধে রাজদ্রোহী হিসেবে লেখালিখি সুরু করলে। তার ফলে জনসাধারণ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। কংগ্রেসের তরফ থেকে এই বিষয়ে ষ্টেটসম্যানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা আনা হল। ষ্টেটম্যান লণ্ডনের ইণ্ডিয়া অফিসের শরনাপন্ন হল। ফলে কোনও রকম প্রতিকার হল না। এদিকে আন্দোলন উত্তরোত্তর বাড়তে লাগলো। এমনি সময়ে হঠাৎ একদিন বাঙ্গলা সরকার রাত্রের অন্ধকারের মধ্যে এ্যাসিসট্যাণ্ট ইন্সপেক্টর জেনারল অব পুলিশ মিষ্টার ললাম্যানের অধীনে একদল বন্দুকধারী পুলিশের পাহারায় সুভাষবাবুকে আরও সাত জন বন্দীর সঙ্গে মান্দালয় জেলে চালান করে দিলেন।

 শোনা যায় এই খবর শুনে সুভাষবাবুর বাবা বলেছিলেন—আমরা সুভাষের জন্যে গর্ব অনুভব করি।

১৭

১৭