পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দল যতীন্দ্রমোহনকে সাহায্য করতো। আশা ছিল তাহলে সুভাষবাবুর প্রভাব খর্ব হয়ে যাবে। যাই হোক সুভাষবাবু মান্দালয় থেকে ফেরবার পর সমস্ত বাঙ্গলাদেশ যখন সুভাষবাবুর মতবাদের দিকে ঝুঁকে পড়লো তখন অনন্যোপায় হয়ে যতীন্দ্রমোহন লাহোর কংগ্রেসে বাঙ্গলার প্রাদেশিক নির্বাচনে বৈধতা অবৈধতা সম্বন্ধে প্রস্তাব তুললেন। কংগ্রেস মতিলাল নেহরুকে ব্যাপারটা পর্যালোচনা করবার জন্যে বাঙ্গলায় পাঠালেন। তিনি সমস্ত অনুসন্ধান করে সুভাষবাবুর পক্ষেই রায় দিয়ে গেলেন। কিন্তু যতীন্দ্রমোহনের দল তাতেও ক্ষান্ত না হয়ে পাশাপাশি আর একটা প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটি গঠন করলে। এবং সমস্ত নির্বাচনে এমন কি মেয়রের নির্বাচনেও যতীন্দ্রমোহন সুভাষবাবুর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নামলেন। কিন্তু আসলে যতীন্দ্রমোহনের কোন প্রভাব ছিল না জনসাধারণের ওপর। তাই ভোটে প্রতি পদে যতীন্দ্রমোহনকে পরাজয় বরণ করে নিতে হল। এর পর থেকে যতীন্দ্রমোহনের দল আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে নি। তবে বাঙ্গলার এই দলাদলির ইতিহাস বাঙ্গলার রাজনৈতিক ইতিহাসের একটা মস্ত বড় কলঙ্কের অধ্যায় সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। বাঙ্গলার বীর নেতা সুভাষচন্দ্র যখন সমস্ত ভারতবর্ষ জুড়ে দক্ষিণপন্থী, সেকেলে আপোষপরায়ণ কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা চালাচ্ছেন—দেশকে আবও বৃহত্তর'ত্যাগ ও সংগ্রামের দিকে চালনা করতে চেষ্টা করছেন—তাঁর একমাত্র লক্ষ্য যখন ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা তখন তারই প্রদেশে সামান্য ক্ষমতার লোভে তাকে এমনভাবে বিব্রত করা মোটেই দেশভক্তির পরিচয় নয়। সুভাষবাবুর আদর্শ সক্রিয় সংগ্রামের আদর্শ, জ্বলন্ত দেশপ্রেম ও অপূর্ব ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত সে পথ। তার পাশে জনজাগরণের যুগে অন্য কোন আদর্শ স্থান পেতে পারে না। যে আদর্শ মানুষকে স্বতঃই উদ্বুদ্ধ করে তোলে, বৃহত্তর কর্মপ্রেরণায় চঞ্চল করে তোলে তাকেই বলি আদর্শ। দল করে বা অন্য কোন নেতার সুনাম ও জনপ্রিয়তার দোহাই দিয়ে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা যায়

৩০