পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সফলকাম জীবনের সম্ভাবনা দিবালোকের মত স্বচ্ছ হয়ে উঠলো। কিন্তু কেউ কি আশা করতে পেরেছিল এই কিশোরের জীবন সমস্ত ভারতীয় জীবনকে এক নতুন দিবালোকে উজ্জ্বল করে তুলবে?

 প্রোটেষ্ট্যাণ্ট ইউরোপীয়ান স্কুল খুব অভিজাত স্কুল ঐ অঞ্চলে। অত উচ্চস্তরের স্কুলে সাধারণ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ছেলেদের পড়া সম্ভব নয়। কিন্তু সুভাষচন্দ্রেব বাবার অবস্থা সকল দিক দিয়েই খুবই অভিজাত। তাই তাকে ঐ স্কুলে থেকেই প্রথম জীবনেব লেখাপড়া সমাপন করতে হয়েছিল। সেই সময়ে তার মনে এই দিক দিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া হয়েছিল কি না তা কিশোর জীবনে প্রকাশ পাওয়াব সুযোগ পায় নি। তবে কলেজ জীবনে তার আত্মপ্রকাশ আমরা পরে জানতে পারবো।

 এই স্কুলে সাত বছর পড়বার পর প্রাইমারী পড়া শেষ করে সুভাষচন্দ্র র‍্যাভেনশ কলোজিয়েট স্কুলে এসে ভর্তি হলেন। এবং এখান থেকেই ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে তিনি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করলেন। এই সব বড়লোকের ইস্কুলে—বড়লোক ছেলেদের সঙ্গে পড়েও তাঁর এই কৃতিত্বে সকলে অবাক হয়ে গেল। কারণ এই রকম বিলাসী আবহাওয়ার মধ্যে সচরাচর এমনটা ঘটে না। তাছাড়া তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময় পড়ার বই ছাড়া অন্যান্য নানা ধরণের বই পড়ে কাটত। সেই সব বইয়ের মধ্যে ধর্মপুস্তকের সংখ্যাই বেশী। গোড়ার দিকেই বলেছি তিনি ছোটবেলা থেকেই ধর্মভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলেন। তার। পর স্কুলে এসে হেডমাষ্টার বেণীবাবুর সাহচর্যে তিনি আরও বেশী উৎসাহিত হযে উঠলেন। বেণীবাবুই তাকে প্রথম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেন। তাছাড়া তার একটি সহপাঠী বন্ধু ছিল—যার নাম হেমন্ত। এই হেমন্ত তার চিরকালের সাথী হয়ে উঠেছিল পরবর্তী যুগে। কলেজী জীবনে যেমন দিলীপ রায়।

 একদিকে মা, অন্যদিকে বেণীবাবু আর সর্বদা বন্ধু হেমন্তের সাহচর্য, এই তিনের সমন্বয়ে তার জীবনের ধারা এগিয়ে চললল স্বাভাবিক বিকাশের দিকে।