পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৯৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 এই অগণিত জনতার সম্মুখে দুঃখিনী বাংলা মায়ের শ্রেষ্ঠ রত্ন বঙ্গবীর সুভাষচন্দ্র উঠে দাঁড়ালেন, যেমন করে কোন প্রাগৈতিহাসিক যুগে পশ্চিমের সমস্ত দুর্যোগের সামনে প্রহরীর মত বুক পেতে দাঁড়িয়ে উঠেছিল হিমশীর্ষ হিমালয়।

 চিত্তজয়ী স্বরে বলে উঠলেন তিনি,— ইতিহাস বিখ্যাত বীর ভারতীয়ের বংশধর আপনারা। আপনারা আর দাস নন। আমি চাই আপনারা মাথা উঁচু করে কথা বলুন। আমাদের শ্রেষ্ঠ নেতা গান্ধীজীর প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি বলছি অস্ত্র দিয়ে অস্ত্রকে ঠেকাতে হবে। ভীরু দাসত্বের জীবনের চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয়! আমরা যদি এক লক্ষ প্রাণ বলিদান দিতে পারি তাহলে আমরা আমাদের চল্লিশ কোটি ভাই বোনদের বৃটিশের দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে পারবো।

 তারপর আবার ৭ই জুলাই তিনি ঘোষণা করলেন,—কেন, কিসের আহ্বানে সব রকম বিপদসঙ্কুল পথে ঘর ছেড়ে আমি বেরিয়ে পড়লুম সে কথা আমি প্রকাশ করে বলতে চাই। অপানারা জানেন ১৯২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডী পার হওয়ার পর থেকেই আমি স্বাধীনতার যুদ্ধে রত আছি। গত বিশ বৎসর পূর্বে সমস্ত অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে আমি বরাববই জড়িত আছি। তার ওপর হিংস হোক আর অহিংস হোক, যে কোন রকমের গোপন বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে আমি যুক্ত আছি এই সন্দেহে বার বার বিনা বিচারে আমি কারাবাসে পতিত হয়েছি।

 এই অভিজ্ঞতার ফলে আমি এই উপসংহারে এসে পৌঁছেছি যে, ভারতের মধ্যে যত শক্তিই আমরা প্রয়োগ করি না কেন তা দিয়ে বৃটিশকে তাড়ানো যাবে না। যদি গৃহের সংগ্রাম আমাদের দেশবাসীর স্বাধীনতা অর্জনের পক্ষে যথেষ্ট হত তাহলে বোকার মত এই অপ্রয়োজনীয় বিপদ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে আমি ঝাঁপিয়ে পড়তাম না।

 সহজ ভাষায় বলতে আমার ভারত ত্যাগের কারণ দেশের ভেতরকার সংগ্রামকে আরও শক্তিশালী করে তোলবার জন্যে বাইরে থেকে সাহায্য করা!

৯১