পাতা:নৈবেদ্য - জলধর সেন.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

जम्नानो । কেদারার উপর দেহভার প্রসারিত করিয়া একবার ভাগীরথীর বিস্তীর্ণ বক্ষে দৃষ্টিনিক্ষেপ করিতেছি, একবার বা পরপারস্থ ধূসর বনরাজির দিকে চাহিয়া দেখিতেছি, আকাশে মেঘ ঘনীভূত হইয়া আসিয়াছে, এবং আদ্র উদাম বায়ুপ্রবাহে প্ৰতি মুহূৰ্ত্তে আসন্ন বৃষ্টির সম্ভাবনা পরিব্যক্ত হইতেছে ; এমন সময়ে দেখিলাম, একখানি দ্রুতগামী পিনেসের উপর বসিয়া একটা লোক,-ঠিক আমার সেই পূর্ব-পরিচিত সন্ন্যাসীর মত। একলম্বেন্ধ উঠিয়া রেলিংএর কাছে আসিলাম, মস্তক প্রসারিত করিয়া তীক্ষ দৃষ্টিতে চাহিয়া দেখিতে লাগিলাম ; দেখিতে দেখিতে নদীর খর স্রোতে পালভারে পিনেস্খানি আমার দৃষ্টিপথ অতিক্ৰম করিল। এ কি আমার সেই সঙ্গী সন্ন্যাসী ? এমন সময়ে তিনি মেঘ ও বৃষ্টি তুচ্ছ জ্ঞান করিয়া বর্ষার তরঙ্গভঙ্গ-ভীষণ ভাগীরথী-প্রবাহে ভাসিতে ভাসিতে কোথায় যাইতেছেন ? ) কিছুই বুঝিতে পারিলাম না। সন্ন্যাসী একাকী, তাহার প্রাণাধিক পুত্ৰ অমর কোথায় ? সে কত বড় হইয়াছে! আর হয় তা তাহাকে দেখিব না। আমি স্থান কাল ভুলিয়া সেই রেলিংএ ভিন্ন দিয়া দাড়াইয়া অতীতের শত দৃশ্য কল্পনানেত্রের সম্মুখে উদ্ভাসিত দেখিলাম। দেখিতে দেখিতে নদীর অপর পার অন্ধকার হইয়া আসিল, সমস্ত আকাশ গাঢ় কৃষ্ণবৰ্ণ মেঘে আচ্ছন্ন হইল, প্রবল বেগে বৃষ্টিধারা পড়িতে লাগিল। সেই ঘনান্ধকারপূর্ণ বর্ষার অপরান্ত্রে, নদীকূলে, এক নির্জন গৃহের বারান্দায় দাড়াইয়া জাকাশ ও পৃথিবীর ট্ৰেই ধারাবর্ষণের মধ্যে আমার অনুমান হইল একটি শান্তিহীন অভিশপ্ত অনাথ তাহার অনুতাপদগ্ধ হৃদয়ভার বক্ষে বহিয়া লক্ষ্যহীন ভাবে কোন অনির্দিষ্ট দেশে ছুটিয়া চলিয়াছে, এবং বর্ষার তীব্র বায়ুপ্রবাহে তাহার বিদীর্ণ হৃদয়ের হাহাকার ভাসিয়া আসিয়া আমার শ্রবণপথে প্ৰবেশ করিতেছে। (区)