পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিশ্বাসঘাতকের মৃত্যুফাঁদ

ধর্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রে আমি বিশ হাজার গ্রীক দস্যু আর ত্রিশ হাজার বিশ্বাসঘাতক ভারতবাসীর মৃত্যু-শয্যা রচনা করবো,—আর তাদের রক্ষা নেই!”

 —“গুরুদেব!”

 —“যাও চন্দ্রগুপ্ত, সৈন্যদের সজ্জিত হবার জন্যে আদেশ দাও। অর্ধচন্দ্র ব্যূহ রচনা ক’রে উচ্ছভূমির উপরে শত্রুদের জন্যে অপেক্ষা করো!”

 -“অপেক্ষা করবো?”

 — “হাঁ, আক্রমণ করবে না, অপেক্ষা করবে। পথশ্রমে ক্লান্ত শত্রুরা কাল এসে দেখবে, তোমরা যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত! সে-অবস্থায় কাল তারা নিশ্চয়ই আক্রমণ করতে সাহস করবে না। তারা আগে বিশ্রাম আর ব্যুহ রচনা করবে। পরশুর আগে যুদ্ধ হওয়া অসম্ভব!”

 —“তারপর?”

 —“তারপর তাদেরই আগে আক্রমণ করবার সুযোগ দিও, তোমরা করবে কেবল আত্মরক্ষা! শত প্রলোভনেও উচ্চভূমি ছেড়ে নীচে নামবে না। যদি একদিন কাটিয়ে দিতে পারো—”

 হঠাৎ চন্দ্রগুপ্তের মুখ সমুজ্জ্বল হয়ে উঠল! তীক্ষ্ণবুদ্ধি চাণক্যের চরণতলে ব’সে প’ড়ে বিপুল আনন্দে তিনি বললেন, “গুরুদেব, গুরুদেব! আমি মূর্খ, তাই এতক্ষণ আপনার উদ্দেশ্য বুঝতে পারি নি! পরশু দিন যদি আমরা আত্মরক্ষা করতে পারি, তাহ’লেই তার পরদিন মহারাজা পুরু এসে প’ড়ে পিছন থেকে শত্রুদের আক্রমণ করবেন! তারপর পঁচাত্তরহাজার ভারত সৈন্যের কবলে প’ড়ে—”

 সুবন্ধু আনন্দে যেন নাচতে নাচতে ব’লে উঠল, “ধন্য আচার্য্যদেব, ধন্য! এ যে অপূর্ব মৃত্যু-ফাঁদ!”

৯৯