পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গোড়ার কথা

অনেক দূর! আপনার অবর্তমানে গ্রীসে যে বিদ্রোহ উপস্থিত হবে!”

 আলেকজাণ্ডার কোনোদিন প্রতিবাদ সহ্য করতে পারতেন না। অধীর স্বরে বললেন, “স্তব্ধ হও তোমরা! পারসীরা যা পেরেছে, আমার পক্ষে তা অসম্ভব নয়। আমি ভারত জয় করবো!”

 যুবক দিগ্বিজয়ীর ক্রুদ্ধ দৃষ্টির সামনে প্রাচীন সেনাপতিরা নীরবে মাথা নত করলেন।

 কিন্তু আলেকজাণ্ডার কি সত্যসত্যই ভারত জয় করতে পেরেছিলেন? পঞ্চনদের তীরে কয়েকটি যুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন বটে, কিন্তু মূলতানের যুদ্ধে আহত হয়ে তিনি প্রায় মৃত্যু-মুখে এগিয়ে গিয়েছিলেন। এবং এই ভারতেই তিনি যে প্রথম পরাজয়ের অপমান সহ্য করতে বাধ্য হন, অধিকাংশ ঐতিহাসিকই সে সম্বন্ধে নীরব। ভারত জয় না ক’রেই গ্রীকরা আবার স্বদেশের দিকে ফিরতে—বা পলায়ন করতে বাধ্য হয়েছিল। আলেকজাণ্ডার ভারতের মাত্র এক প্রান্তে পদার্পণ করেছিলেন। এবং স্বদেশে প্রস্থান করবার সময়ে বড় বড় সেনাপতি ও অনেক সৈন্যসামন্ত উত্তরভারতের ঐ অধিকৃত অংশ রক্ষা করবার জন্যে রেখে গিয়েছিলেন। কিন্তু পূর্ব-ভারতের মহাবীরদের কবলে প’ড়ে তাদের যে অভাবিত দুর্দশা হয়, পাশ্চাত্য ঐতিহাসিকরাও সে কাহিনী গোপন রাখতে পারেন নি। এ-সব কথা যথাসময়েই তোমাদের কাছে বলা হবে।

 মনে রেখো, আলেকজাণ্ডারের যুগে ভারতে বৈদিক হিন্দুধম প্রচলিত ছিল। হিন্দুরা তখন মূর্তি-পূজাও করতেন না, দেবমন্দিরও গড়তেন না, কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, হিন্দু ও বৌদ্ধরা মূর্তি ও মন্দির গড়তে শেখেন গ্রীকদের কাছ থেকেই। এ কথা কতটা সত্য জানিনা, তবে গ্রীকদের ভারতে আসবার আগে বুদ্ধদেবের মূর্তি যে কেউ গড়েনি, সে-বিষয়ে কোনোও সন্দেহ নেই।


১১