পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

 ইস্‌সাস্ রণক্ষেত্রে প্রথমে প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের শক্তি পরীক্ষা হয় (খৃঃ পূঃ ৩৩২)। ছয় লক্ষ সৈন্য নিয়ে দরায়ুস আক্রমণ করলেন আলেকজাণ্ডারকে। সংখ্যায় গ্রীকরা যথেষ্ট দুর্বল ছিল এবং দরায়ুসের যুদ্ধপ্রতিভা থাকলে সেইদিনই মিলিয়ে যেত আলেকজাণ্ডারের দিগ্বিজয়ের স্বপ্ন। কিন্তু অতিশয় নির্বোধের মতো দরায়ুস একটি সংকীর্ণ ক্ষেত্রের মধ্যে নিজের বিপুল বাহিনী চালনা করলেন। ফলে সংখ্যায় ঢের বেশী হয়েও পারসীরা কিছুই করতে পারলে না। তারা পঙ্গপালের মতো দলে দলে মারা পড়ল, বাদবাকী ইউফ্রেটেস্ নদী পেরিয়ে পালিয়ে গেল।

 পরে-পরে আরো অনেকগুলি যুদ্ধে জয়লাভ ক’রে আলেকজাণ্ডার পারস্য সাম্রাজ্যের অধিকাংশ দখল করলেন। পারস্যের রাজধানী বিখ্যাত নগর পার্সিপোলিস্‌কে অগ্নিশিখায় আহুতি দেওয়া হ’ল এবং এক স্বদেশী বিশ্বাসঘাতকের হস্তে দরায়ুসও মারা পড়লেন।

 বিজয়ী আলেকজাণ্ডার তখন সগর্বে পৃথিবীর চতুর্দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। কিন্তু য়ুরোপে ও আফ্রিকায় তখনকার সভ্য-জগতে নিজের কোনো যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী দেখতে পেলেন না। রোমের জন্ম হয়েছে, কিন্তু আগেই বলেছি, সে তখন শিশু।

 হঠাৎ আলেকজাণ্ডারের মনে পড়ল ভারতবর্ষের কথা। ভারতীয় সভ্যতার খ্যাতি তখন দেশ-দেশান্তর অতিক্রম ক’রে গ্রীসেও গিয়ে উপস্থিত হয়েছে। বাণিজ্য-পথেও ভারতীয় পণ্যদ্রব্যের আদর কম নয়। ভারতে ও পারসীদের সাম্রাজ্যের অংশ আছে। এবং যুদ্ধক্ষেত্রেও পারসীদের পক্ষে উত্তর ভারতীয় দীর্ঘদেহ সবলবাহু আর্য বীরদের পরাক্রম আলেকজাণ্ডার স্বচক্ষে দেখবার সুযোগ পেয়েছিলেন।

 আলেকজাণ্ডার বললেন, “আমি ভারত জয় করবো। পারস্যসাম্রাজ্যের শেষ-চিহ্নও আর রাখবো না!”

 সেনাপতিরা ভয় পেয়ে বললেন, “বলেন কি সম্রাট! সে যে

১০