পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অভিনেতা দিগ্বিজয়ী

 কিন্তু আলেকজাণ্ডার নিরেট কাঠ-গোঁয়ার যোদ্ধা ছিলেন না। অমর গ্রীক দার্শনিক আরিষ্টোট্‌ল্‌ ছিলেন তাঁর শিক্ষাগুরু! অস্ত্রচালনার সঙ্গে সঙ্গে তিনি মস্তিষ্কচালনাও করতে শিখেছিলেন।

 আলেকজাণ্ডারের চরিত্র ছিল অদ্ভুত। কখনো তিনি হ’তেন পাহাড়ের মতোন কঠোর, কখনো বজ্রের মতোন নিষ্ঠুর, আবার কখনো বা শিশুর মতোন কোমল! নিজেকে তিনি ভাবতেন সর্বশক্তিমান দেবতার মতো এবং সেইজন্যে অনেক সময়েই পৌরাণিক দেবতার পোষাক প’রে থাকতেন। এই অহমিকার জন্যেই আলেকজাণ্ডার যাত্রাপথের নানা স্থানে করেছিলেন নিজের নামে নব নব নগরের প্রতিষ্ঠা। অনেকের মতে, আফগানিস্থানের কান্দাহার সহরের নাম আলেকজান্দ্রিয়ারই অপভ্রংশ।

 ভারতবর্ষ আক্রমণ করবার আগে, আশপাশের শত্রুনাশ ক’রে যাত্রাপথ সুগম করবার জন্যে আলেকজাণ্ডার দিগ্বিজয়ী রূপে প্রায় মধ্য-এসিয়ার বুক পর্যন্ত গিয়ে পড়েছিলেন—কোথাও কেউ তাঁর অগ্রগতিতে বাধা দিতে পারে নি।

 আলেকজাণ্ডার যখন তুর্কীস্থানের বিখ্যাত সহর সমরখন্দে বিশ্রাম করছেন, সেই সময়েই আমরা প্রথম যবনিকা তুলবো।

 শিবিরের এক অংশে একাকী ব’সে আলেকজাণ্ডার একমনে বই পড়ছেন।

 বই পড়তে তিনি বড় ভালোবাসেন। স্বদেশ থেকে বহুদূরে এসে প’ড়ে, পথে-বিপথে হাজার হাজার সৈন্য নিয়ে ঘূর্ণী হাওয়ার মতো ছুটোছুটি ক’রে এতদিন তিনি বই পড়বার সময়ও পান নি এবং বইয়ের অভাবও ছিল যথেষ্ট। সংপ্রতি সে অভাব মিটেছে, গ্রীস থেকে তাঁর হুকুমে ঈস্কিলাস, এইরিপিদেস্ ও সোফোক্লেস্ প্রভৃতি কবি এবং অন্যান্য পণ্ডিতদের রচিত নানারকম চিত্তাকর্ষক গ্রন্থ এসে পড়েছে।

১৩