পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

 আলেকজাণ্ডার তখনি শিরস্ত্রাণ উপুড় ক’রে ধরলেন এবং দেখতে দেখতে শুক্‌নো মাটি তা নিঃশেষে শুষে নিলে।

 মহারাজার উদারতা ও স্বার্থত্যাগ দেখে হাজার হাজার কণ্ঠ তাঁর নামে জয়ধ্বনি দিয়ে উঠল।

 আলেকজাণ্ডার সৈনিকদের কণ্ঠে এম্‌নি জয়ধ্বনি শুনতেই অভ্যস্ত ছিলেন,—কিন্তু তাদেরই কণ্ঠে জেগেছে আজ বিদ্রোহের বেসুরো চীৎকার!

 বাপ যেমন ছেলেদের চেনে, আলেকজাণ্ডারও তেমনি তাঁর সৈন্যদের ধাত চিনতেন। কাজেই কিছুমাত্র সঙ্কুচিত না হয়ে তখনি তিনি তাঁবুর বাইরে গিয়ে দেখলেন সেখানে অনেক গ্রীক এসে বৃহৎ এক জনতার সৃষ্টি করেছে এবং তাদেরই পুরোভাগে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তাঁর অদ্বিতীয় বন্ধু ক্লিটাস্।

 বন্ধু ক্লিটাস্—জীবন-রক্ষক ক্লিটাস্! আলেকজাণ্ডারের মনে পড়ল ছয় বৎসর আগেকার একদিনের কথা! গ্রানিকাশের রণক্ষেত্রে যখন দুইজন পারসী সেনাপতি একসঙ্গে তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এবং যখন তাদের উদ্যত অস্ত্রের কবল থেকে আলেকজাণ্ডারের মুক্তি পাবার কোনো উপায়ই ছিল না, তখন এই মহাবীর ক্লিটাসই সেখানে আবির্ভূত হয়ে সিংহবিক্রমে তাঁর প্রাণরক্ষা করেছিলেন। সেই দিন থেকেই ক্লিটাস্ হয়েছেন তাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধু।

 আলেকজাণ্ডার তাঁবুর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন, “ব্যাপার কি, ক্লিটাস্?”

 ক্লিটাস্ বললেন, “সৈন্যরা কেউ ভারতবর্ষে যেতে রাজি নয়।”

 —“কেন?”

 —“ওরা বলছে, গৌগেমেলার রণক্ষেত্রে দরায়ুসের সেনাদলে ওরা ভারতীয় সৈন্যদের যুদ্ধ করতে দেখেছে। দূর বিদেশে পরের জন্যে

১৮