পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অভিনেতা দিগ্বিজয়ী

তরবারি ধ’রে সেই কয় শত ভারতীয় বীর যে কৃতিত্ব দেখিয়েছিল, ওদের আজও তা মনে আছে। আজ আমরা চলেছি তাদেরই স্বদেশে—যেখানে সংখ্যায় হবো আমরা তুচ্ছ, আর তারা হবে অগণ্য। ওরা তাই ভয় পেয়েছে, হাজার হাজার মাইল পথ পেরিয়ে শত শত নদী, বন, পাহাড়ের ওপারে সেই দুর্গম ভারতবর্ষে যাবার ইচ্ছা ওদের নেই।”

 আলেকজাণ্ডার ঘৃণাভরে বললেন, “গ্রীক সেনার ভয়! দেবাশ্রিত আমার সৈন্য, ভারতবর্ষের নামে তাদের ভয় হয়েছে! ক্লিটাস্‌, তুমিও কি ওদের দলে?”

 —“হাঁ সম্রাট! আমারও মত হচ্ছে, এই মিথ্যা দুঃসাহস দেখিয়ে আমাদের কোনোই লাভ হবে না!”

 আলেকজাণ্ডার পরিপূর্ণ কণ্ঠে বললেন, “শোনো ক্লিটাস্! শোনো সৈন্যগণ! আমাদের আর ফেরবার কোনোও উপায়ই নেই। আমাদের স্বদেশ আজ বহুদূরে, আমাদের চতুর্দিকে আজ বিদেশী শত্রু! আমরা যদি আজ দেশের দিকে ফিরি, তাহ’লে শত্রুরা ভাববে আমরা তাদের ভয়েই পালিয়ে যাচ্ছি। আজ আমাদের বাহুবল দেখে যে লক্ষ লক্ষ শত্রু মাথা লুকিয়ে আছে, তারা তখন চারিদিক থেকে পঙ্গপালের মতো বেরিয়ে গ্রীক সৈন্যদের আক্রমণ ক’রে টুক্‌রো টুক্‌রো ক’রে ফেলবে। শত্রুর শেষ রেখে ফিরতে গেলে আমাদের কারুকে আর বাঁচতে হবে না। বিশেষ, ভারতবর্ষ হচ্ছে পারস্য সাম্রাজ্যের অংশ, এখন তাকে জয় করতে না পারলে আমাদের দিগ্বিজয়ও ব্যর্থ হয়ে যাবে।”

 ক্লিটাস্ বললেন, “কিন্তু ভারতবর্ষে গিয়ে তাকে জয় করতে না পারলে আমাদের কি অবস্থা হবে?”

 আলেকজাণ্ডার ক্রুদ্ধ স্বরে বললেন, “সে কথা ভাববো আমি। তোমাদের কর্তব্য আমার আদেশ পালন করা।”

১৯