পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভারতবর্ষের জন্ম!

ভারতবর্ষকে? তোমারি উচ্চাকাঙ্খা ছিল সারা পৃথিবী জয় করা— আমাদের স্বদেশ গ্রীসের গৌরব বর্ধন করা! গ্রীস যে তোমাকে ছাড়তে পারে না, তার প্রতি তোমার কি কর্তব্য নেই?”

 পার্মেনিও ঠিক জায়গায় আঘাত দিয়েছিলেন, আলেকজাণ্ডার আবার প্রকৃতিস্থ হয়ে দৃঢ় স্বরে ব’লে উঠলেন, “ঠিক বলেছেন সেনাপতি, স্বদেশের প্রতি আমার কর্তব্য আছে—আমি আত্মহত্যা করলে গ্রীস পৃথিবীর সম্রাজ্ঞী হ’তে পারবে না। আমাদের কর্তব্য হচ্ছে এখন ভারতবর্ষ জয় করা! এত দূরে এসে, এত রক্তপাত ক’রে আমাদের ফেরা চলে না! সেনাপতি, আপনি এখনি বাইরে গিয়ে আমার নামে হুকুম দিন, সৈন্যরা ভারতবর্ষে যাত্রা করবার জন্যে প্রস্তুত হোক!”

 সম্রাটের মন ফিরেছে দেখে, পার্মেনিও সানন্দে শিবিরের বাইরে খবর দিতে ছুটলেন।

 অনতিবিলম্বেই হাজার হাজার সৈনিকের সম্মিলিত কণ্ঠে সমুদ্রগর্জনের মতো শোনা গেল—“ভারতবর্ষ! ভারতবর্ষ! ভারতবর্ষ!”

 রাজপথ দিয়ে যাচ্ছিল তিনজন অশ্বারোহী সৈনিক—সুবন্ধু, চিত্ররথ, পুরঞ্জন। নাম শুনে বিস্মিত হবার দরকার নেই, কারণ তারা ভারতের ছেলে। সেই গৌরবময় যুগে ভারতের বীর ছেলেরা তরবারি সম্বল ক’রে ভাগ্যান্বেষণের জন্যে সুদূর পারস্য ও তুর্কীস্থান প্রভৃতি দেশেও যেতে ইতস্তত করত না, ইতিহাসেই সে সাক্ষ্য আছে। কালিদাসের কাব্যেও দেখবে, রাজ। রঘু ভারতের মহাবীরদের নিয়ে পারসী ও হুনদের দেশে গিয়ে হাজার হাজার শত্রুনাশ ক’রে এসেছেন। সুবন্ধু, চিত্ররথ ও পুরঞ্জন সেই ডানপিটেদের দলেরই তিন বীর। গ্রীক বাহিনীর মিলিত কণ্ঠে ভারতবর্ষের নাম শুনে তারা সবিস্ময়ে ঘোড়াদের থামিয়ে ফেললে।

২৭