পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

 একজন গ্রীক সৈনিক উত্তেজিত ভাবে শিবিরের দিকে যাচ্ছে দেখে সুবন্ধু বললে, “ওহে বন্ধু, কোথা যাও? তোমাদের সৈন্যরা কি আজ বড্ড বেশী মাতাল হয়ে পড়েছে? তারা ‘ভারতবর্ষ ভারতবর্ষ’ ব’লে অত চ্যাঁচাচ্ছে কেন?”

 গ্রীক সৈনিক ব্যস্ত স্বরে বললে, “এখন গল্প করবার সময় নেই। সম্রাট হুকুম দিয়েছেন, এখনি আমাদের শিবির তুলতে হবে।”

 —“কেন, তোমরা কোথায় যাচ্ছ?”

 গ্রীক সৈনিক গর্বিত স্বরে বললে, “আমরা ভারতবর্ষ জয় করতে যাচ্ছি”——বলেই দ্রুতপদে চ’লে গেল।

 সুবন্ধু বললে, “সর্বনাশ!”

 পুরঞ্জন বললে, “এও কি সম্ভব?”

 সুবন্ধু বললে, “আলেকজাণ্ডারকে দিগ্বিজয়ের নেশা পেয়ে বসেছে। তাঁর পক্ষে কিছুই অসম্ভব নয়।”

 চিত্ররথ বললে, “ভারতবর্ষ আমাদের জন্মভূমি। এ দুঃসংবাদ সেখানে কেউ এখনো শোনে নি।”

 পুরঞ্জন শুষ্কস্বরে বললে, “দুর্জয় গ্রীকবাহিনী, অপ্রস্তুত ভারতবর্ষ! এখন আমাদের কর্তব্য?”

 সুবন্ধু কিছুক্ষণ নীরবে গ্রীক শিবিরের কর্ম-ব্যস্ততা লক্ষ্য করতে লাগল—তার দুই ভুরু সঙ্কুচিত, কপালে দুশ্চিন্তার রেখা। কোনো গ্রীক তাঁবুর খোঁটা তুলছে, কেউ ঘোড়াকে সাজ পরাচ্ছে, কেউ নিজে পোষাক পরছে, সেনাপতিরা হুকুম দিচ্ছেন, লোকজনেরা ছুটাছুটি করছে!

 চিত্ররথ বললে, “এখনি বিরাট ঝটিকা ছুটবে ভারতবর্ষের দিকে। আমরা তিনজন মাত্র, এ ঝড়কে ঠেকাবো কেমন ক’রে?”

 সুবন্ধু হঠাৎ ঘোড়ার মুখ ফিরিয়ে বললে, “চলো চিত্ররথ! চলো

২৮