পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মুখপাত

 প্রাচীন ঐতিহাসিক ভারতের সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ স্বদেশভক্ত বীর ও সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত সম্বন্ধে ভারতীয় জনসাধারণের পরিষ্কার ধারণা নেই। ভারতব্যাপী দেশাত্মবোধের এই নব-জাগরণের যুগেও দেশীয় বিদ্যামন্দিরের পাঠ্য ইতিহাসে এখনকার ছেলে-মেয়েদের এ-সম্বন্ধে সচেতন করবার চেষ্টা দেখা যায় না। আমাদের সত্যিকার জাতীয় জীবনের এই অসাড়তা লক্ষ্য করলে হতাশ হ'তে হয়।

 “পঞ্চনদের তীরে” উপন্যাস বটে, কিন্তু এর আখ্যানবস্তু কোথাও ঐতিহাসিক ভিত্তি ছেড়ে অগ্রসর হবার চেষ্টা করে নি। যে-সময়ের কথা আমি বলতে বসেছি, সে-সময়কার ঐতিহাসিক সূত্র এখনো নানা স্থানে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে, সেই কারণে স্থলবিশেষে উপন্যাসের মর্যাদা ও ধারাবাহিকতা রক্ষা করবার জন্যে কিছু-কিছু কল্পনার আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি, কিন্তু সে-কল্পনাও কোথাও ঐতিহাসিক সত্যকে বাধা দেয় নি।

 ধরুন, শশীগুপ্তের কথা। ঐ দেশদ্রোহীর শেষ-জীবন অতীতের অন্ধকারের মধ্যে চিরদিনের জন্যে লুপ্ত হয়ে গেছে, ইতিহাসও তার সম্বন্ধে নীরব। কিন্তু তার একটা পরিণাম না দেখালে উপন্যাস হয় অসম্পুর্ণ। অতএব ওখানে কল্পনা ব্যবহার করা ছাড়া উপায়ান্তর নেই এবং গোঁড়া ঐতিহাসিকরাও সে-জন্যে আপত্তি প্রকাশ করবেন ব’লে মনে হয় না। তারপর ধরুন, সুবন্ধু প্রভৃতি সম্পর্কীয় ঘটনাবলী। প্রাচীন ইতিহাসকে ভালো ক’রে গল্পের ভিতর দিয়ে দেখাবার জন্যেই ওদের অবতারণা করা হয়েছে। সুবন্ধু প্রভৃতি ভাগ্যান্বেষী সৈনিক বটে, কিন্তু সেকালকার ভারতে ওদের মতন লোকের ভিতরেও যে অতুলনীয় বীরত্ব ও স্বদেশভক্তির অভাব ছিল না, Massaga নামক স্থানে আলেকজাণ্ডারের দ্বারা সাত-হাজার