পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজার ঘোড়া

 রাজার কপালে চিন্তার রেখা, যুগ্ম-ভুরু সঙ্কুচিত। সুবন্ধুর বার্তা তিনি শুনে অনেকক্ষণ মৌনব্রত অবলম্বন ক’রে রইলেন। তারপর ধীর-গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি কোন্ পথ দিয়ে ভারতে এসেছ?”

 —“খাইবার গিরিসঙ্কট দিয়ে।”

 —“যবন সৈন্য কোন্ পথ দিয়ে আসছে?”

 —“কাবুল নদের পার্শ্ববর্তী উপত্যকা দিয়ে। কিন্তু তারা এখন আর আসছে না মহারাজ, এতক্ষণে এসে পড়েছে।”

 — “তুমি আর কি কি সংবাদ সংগ্রহ করেছ, বিস্তৃত ভাবে বলো!”

 সুবন্ধু বলতে লাগল, “মহারাজ, নিবেদন করি! আলেকজাণ্ডার তাঁর দুজন বড় বড় সেনাপতিকে সিন্ধুনদের দিকে যাত্রা করবার হুকুম দিয়েছেন। তাঁদের নাম হেফাইস্স্সান্ আর পার্ডিক্কাস্‌! এই খবর নিয়ে প্রথমে আমি তক্ষশীলার মহারাজার কাছে যাই। কিন্তু বলতেও লজ্জা করে, তক্ষশীলার মহারাজার মুখ এই দুঃসংবাদ শুনে প্রসন্ন হয়ে উঠল। তিনি বললেন, ‘যবন আলেকজাণ্ডার আমার শত্রু নন, আমি আজকেই বন্ধু রূপে তাঁর কাছে দূত পাঠাবো। তিনি এসে স্বদেশী শত্রুদের কবল থেকে আমাকে উদ্ধার করবেন।’ আমি বললুম, ‘সে কি মহারাজ, আলেকজাণ্ডার যে ভারতের শত্রু! তিনি অম্লানবদনে বললেন, ‘ভারতে নিত্য শত শত বিদেশী আসছে, আলেকজাণ্ডারও আসুন, ক্ষতি কি? যে তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলবে, তিনি হবেন কেবল তারই শত্রু। তবে তাঁকে দেশের শত্রু বলবো কেন? আর ভারতের কথা বলছ? ভারত কি আমার একলার? বিশাল ভারতে আছে হাজার হাজার রাজা, সুযোগ পেলেই তারা আমার রাজ্য লুট করতে আসবে, তাদের জন্যে আমি একলা প্রাণ দিতে

৫৫