পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

 নগর-তোরণে এসেই অশ্বারোহী ঘোড়া থেকে লাফিয়ে প’ড়ে উত্তেজিত সুরে ব’লে উঠল, “আমাকে মহারাজা হস্তীর কাছে নিয়ে চলো!”

 প্রহরী মাথা নেড়ে বললে, “সে হয় না। আগে বলো কে তুমি, কোথা থেকে আসছ?”

 গম্ভীর স্বরে সুবন্ধু বললে, “আমি ভারতসন্তান সুবন্ধু। আসছি হিন্দুকুশ ভেদ ক’রে শত শত গিরি নদী অরণ্য পার হয়ে!”

 —“কী প্রয়োজনে?”

 সুবন্ধুর বিরক্ত দুই চোখে জাগল অগ্নি! অধীর স্বরে বললে, “প্রয়োজন? ওরে ঘুমন্ত, ওরে অজ্ঞান, যবন আলেকজাণ্ডার মহাবন্যার মতো ধেয়ে আসছে হিন্দুস্থানের দিকে, তার লক্ষ লক্ষ সৈন্য রক্তগঙ্গার তরঙ্গে ভাসিয়ে দেবে আর্যাবর্তকে, এখন কি তোমাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি করবার সময় আছে? নিয়ে চলো আমাকে মহারাজের কাছে! শত্রু ভারতের দ্বারে উপস্থিত, প্রত্যেক মুহূর্ত এখন মূল্যবান।”

...... ...... ......

...... ......

 মন্ত্রণাগার! রাজা হস্তী সিংহাসনে। অপূর্ব তাঁর দেহ—দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে যথার্থ পুরুষোচিত। ধব্‌ধবে গৌরবর্ণ, প্রশস্ত ললাট, আয়ত চক্ষু, দীর্ঘ নাসিকা, দৃঢ়-সংবদ্ধ ওষ্ঠাধর, কবাট বক্ষ, সিংহ-কটি, আজানুলম্বিত বাহু। তাঁকে দেখলেই মহাভারতে বর্ণিত মহাবীরদের মূর্তি মনে পড়ে।

 রাজার ডানপাশে মন্ত্রী, বাঁ-পাশে সেনাপতি, সামনে কক্ষতলে হাত-জোড় ক’রে জানু পেতে উপবিষ্ট সুবন্ধু—সর্বাঙ্গ তার পথধূলায় ধূসরিত।

৫৪