পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজার ঘোড়া

মতে, অন্তত দেড় লক্ষ। কারণ পথে আসতে আসতে আলেকজাণ্ডার অসংখ্য পেশাদার সৈন্য সংগ্রহ করেছেন।”

 হস্তী বললেন, “কিন্তু বিদেশী যবনরা ভারতে ঢুকবার নতুন পথের সন্ধান জানলে কেমন করে?”

 সুবন্ধু তিক্তস্বরে বললে, “ভারতের এক কুসন্তান পিতৃভূমির বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ ক’রে যবনদের পথ দেখিয়ে আনছে। নাম তার শশীগুপ্ত, সে নাকি আলেকজাণ্ডারের বিশ্বস্ত এক সেনাপতি। মহারাজ, এই শশীগুপ্তের সঙ্গে রণস্থলে একবার মুখোমুখি দেখা করবো, এই হ’ল আমার উচ্চাকাঙ্ক্ষা! আর্যাবর্তের শত্রু আর্য! এ-কথা কল্পনাতীত!” বলতে বলতে তার বলিষ্ঠ ও বৃহৎ দেহ রুদ্ধ ক্রোধে যেন দ্বিগুণ হয়ে উঠল।

 হস্তী একটু হেসে বললেন, “শান্ত হও লুবন্ধু, শশীগুপ্ত এখন তোমার সামনে নেই।......মন্ত্রীমহাশয়, এখন আমাদের কর্তব্য কি? শিয়রে শত্রু, এখনো আমরা ঘুমাবো, না জাগবো? হাত জোড় করবো, না তরবারি ধরবো? গলবস্ত্র হবো, না বর্ম পরবো? আপনি কি বলেন?”

 বৃদ্ধ মন্ত্রী মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, “দেড় লক্ষ যবন-সৈন্যের সামনে আমাদের পঁচিশ-ত্রিশ হাজার সৈন্য কতক্ষণ দাঁড়াতে পারবে মহারাজ? ঝড়ের মুখে একখণ্ড তুলোর মতো উড়ে যাবে!”

 সুবন্ধু বললে, “মন্ত্রী-মহাশয়, বৃশ্চিক হচ্ছে ক্ষুদ্র জীব, কিন্তু বৃহৎ মানুষও তাকে ভয় করে। ক্ষুদ্র হ’লেই কেউ তুচ্ছ হয় না।”

 মন্ত্রী হেসে বললেন, “যুবক তোমার উপমা ঠিক হ’ল না। মানুষ বৃশ্চিককে ভয় করলেও এক চপেটাঘাতে তাকে হত্যা করতে পারে।”

 সুবন্ধু বললে, “মানলুম। কিন্তু আলেকজাণ্ডারের মূল বাহিনী এখানে আসতে এখনো অনেক দেরী আছে। তাঁর দুই সেনাপতির অধীনে বোধ হয় পঞ্চাশ হাজারের বেশী সৈন্য নেই।”

৫৭