পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

 —“যুবক, তুমি কেবল বর্তমানকে দেখছ, ভবিষ্যৎ তোমার দৃষ্টির বাইরে! আজ আমরা অস্ত্র ধরবো, কিন্তু কাল যখন যবনসম্রাট নিজে আসবেন সসৈন্যে, তখন আমরা কি করবো?”

 সুবন্ধু বললে, “আপনার মতন বিজ্ঞতা আমার নেই বটে, কিন্তু ভবিষ্যৎকে আমি ভুলিনি মন্ত্রী-মহাশয়! ভারতে আসবার পথের উপরেই আছে আপনাদের গিরিদুর্গ। সেই গিরি-দুর্গে গিয়ে আপনারা যবন-সেনাপতিদের পথরোধ করুন। যদি দু-মাস দুর্গ রক্ষা করতে পারেন, যবন-সম্রাট স্বয়ং এলেও আপনাদের ভয় নেই।”

 —“কেন?”

 —“ইতিমধ্যে আমি আমার দেশে—মহারাজা গুরুর রাজ্যে ফিরে যাবো। আমাদের মহাবীর মহারাজাকে কে না জানে? তাঁর কাছ থেকে তক্ষশীলার কাপুরুষতা দুঃস্বপ্নেও কেউ প্রত্যাশা করে না। তাঁর জীবনের সাধনাই হচ্ছে বীরধর্ম। যবনরা আর্যাবতে ঢুকতে উদ্যত শুনলেই তিনি ক্রুদ্ধ সিংহের মতো গর্জন ক’রে এখানে ছুটে আসবেন! তার উপরে অভিসার রাজ্যের শত্রু তক্ষশীলা যখন যবনদের পক্ষ অবলম্বন করবে, অভিসারের রাজা তখন নিশ্চয়ই থাকবেন আপনাদের পক্ষে।”

 মন্ত্রী জবাব দিলেন না, হতাশভাবে ক্রমাগত মাথা নাড়তে লাগলেন।

 হস্তী আবার একটি দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ ক’রে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “সুবন্ধু, আমাকে ভাবতে সময় দাও—কারণ এ হচ্ছে জীবন-মরণের প্রশ্ন! যবনরা প্রবল, আমরা দুর্বল। তুমি তিন দিন বিশ্রাম করো, আমি ইতিমধ্যে সমস্ত সংবাদ সংগ্রহ করি!”

৫৮