পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

 সুবন্ধু অভিবাদন ক’রে বললে, “আপনি আদেশ দিলে শিরোধার্য করবো। কিন্তু দূতকে বহন ক’রে নিয়ে যেতে হবে আমার মৃতদেহ।”

 —“দূত, তুমি কি সুবন্ধুর মৃতদেহ বহন ক’রে নিয়ে যেতে পারবে? দেখছ, সুবন্ধুর দেহ ক্ষুদ্র নয়, আমারই মতো বৃহৎ? আমার মতে, পতঙ্গের উচিত নয় যে মাতঙ্গকে বহন করতে যাওয়া। পারবে না, কেবল হাস্যাস্পদ হবে।”

 —“আপনার একথা থেকে কি বুঝবো? আপনি সম্রাট আলেকজাণ্ডারকে অতিথিরূপে অভ্যর্থনা করতে প্রস্তুত নন?”

 দূতের কথার জবাব না দিয়ে মহারাজা হস্তী বাঁ-পাশে ফিরে তাকালেন। সেনাপতি নিজের কোষবদ্ধ তরবারি নিয়ে অন্যমনস্ক ভাবে নাড়াচাড়া করছেন। হাসতে হাসতে মহারাজা বললেন, “কি দেখছ সেনাপতি? অনেক দিন যুদ্ধ করনি, তোমার তরবারিতে কি ম’র্চে প’ড়ে গেছে?”

 —“না মহারাজ, ম’র্চে-পড়া অসুখ আমার তরবারির কোনদিন হয় নি।”

 —“তবে?”

 —“তরবারি নাড়লে-চাড়লে সঙ্গীতের সৃষ্টি হয়। তাই আমি তরবারি নাড়াচাড়া করছিলুম।”

 —“বেশ করছিলে। অনেকদিন আমি তরবারির গান শুনিনি। শোনাতে পারবে?”

 —“আদেশ দিন মহারাজ!

 হস্তী আচম্বিতে সিংহাসন ত্যাগ ক’রে দাঁড়িয়ে উঠলেন। চোখের নিমিষে নিজের খাপ্‌ থেকে তরোয়াল খুলে শূন্যে তুলে জলদ-গম্ভীর স্বরে বললেন, “শোনাও তবে মুক্ত তরবারির রক্তরাগিণী—নাচাও তবে জীবনের বুকে মৃত্যুর ছন্দ! প্রাচীন আর্যাবর্তে

৬০