পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজার ঘোড়া

এ রাগিণীর ছন্দ নূতন নয়—ভীম, অর্জুন, ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ কত বীর কতবার ধনুকের টঙ্কারে অসির ঝঙ্কারে এই অপূর্ব সঙ্গীতের সাধনা ক’রে গেছেন, ভারত যে যুগযুগান্তরেও তাঁদের সাধনা ভুলবে না—”

 বৃদ্ধ মন্ত্রী বাধা দিয়ে হতাশভাবে মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, “মহারাজ—মহারাজ—”

 বাধা দিয়ে ক্রুদ্ধ স্বরে হস্তী বললেন, “থামুন মন্ত্রী-মহাশয়! তরবারি যেখানে গান গায় বৃদ্ধের স্থান সেখানে নয়! সেনাপতি, ডাক দাও তোমার দেশের ঘরে ঘরে দুরন্ত বেপরোয়া বাঁধনখোলা যৌবনকে, গগনভেদী অট্টহাসির মধ্যে লুপ্ত হ’য়ে যাক্ হিসেবী বিজ্ঞতার বাণী!”

 দূত বললে “মহারাজ, উত্তর!”

 হস্তীর চক্ষে আবার জাগ্রত অগ্নি। “উত্তর চাও, দূত? কাকে উত্তর দেবো? বজ্রকণ্ঠে তিনি বললেন, যবন-সম্রাট অতিথি হ’লে আমি তাঁর প্রশ্নের উত্তর মুখেই দিতুম, কিন্তু তিনি এসেছেন দস্যুর মতো ভারতের স্বর্ণভাণ্ডার লুণ্ঠন করতে। দস্যুর উত্তর থাকে তরবারির সঙ্গীতে! যাও!”

 পরদিনের প্রভাত-সূর্যও পৃথিবীর বুকে বহিয়ে দিয়েছেন স্বর্ণরশ্মির বিপুল বন্যা। সূর্য হচ্ছেন আর্যাবর্তের দেবতা। আজও ভারত তাঁর স্তবের মন্ত্র ভোলে নি।

 মহারাজা হস্তীর রাজ্যে সেদিন প্রভাতে কিন্তু স্তব জেগেছিল রণদেবতার। গম্-গমা-গম্ বাজছে ভেরী, ভোঁ-ভোঁ-ভোঁ বাজছে তুরী, আর বাজছে অসি ঝন্-ঝনা-ঝন্! সূর্যকরে জ্বলন্ত বর্ম প’রে সশস্ত্র ভারতবীরবৃন্দ রাজপথে চরণতাল বাজিয়ে অগ্রসর হয়েছে, গৃহে গৃহে ছাদে ছাদে, বাতায়নে, অলিন্দে দাঁড়িয়ে ভারতের

৬১