পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সপ্তম পরিচ্ছেদ

অখণ্ড ভারত-সাম্রাজ্যের স্বপ্ন

 ছুটে চলেছে তেজীয়ান ঘোড়া, যেন শরীরী ঝটিকা! পৃষ্ঠে আসীন সুবন্ধু, যেন তীব্র অগ্নিশিখা!

 কখনো জনাকীর্ণ নগর, কখনো শান্ত গ্রাম, কখনো রৌদ্রদগ্ধ প্রান্তর, কখনো দুর্গম অরণ্য এবং কখনো বা অসমোচ্চ পার্বত্য প্রদেশের মধ্য দিয়ে, পথ ও বিপথের উপর দিয়ে, সেতুহীন নদীর বুকের ভিতর দিয়ে সূবন্ধুর দুরন্ত ঘোড়া এগিয়ে চলল তুরন্ত গতিতে! দেখতে দেখতে সুদূরের মেঘস্পর্শী তুষারধবল পর্বতমালা দৃষ্টিসীমা থেকে মিলিয়ে গেল ক্ষীন হ’তে ক্ষীণতর স্বপ্নের মতো।

 সুবন্ধু যেতে যেতে লক্ষ্য করলে, ইতিমধ্যেই এ-অঞ্চলের হাটেমাঠে-বাটে নগরে গ্রামে বিষম উত্তেজনার সাড়া প’ড়ে গিয়েছে! অসংখ্য যবন সৈন্য নিয়ে বিদেশী দিগ্বিজয়ী আসছে ভারত-লুণ্ঠনে, এ দুঃসংবাদ এখানকার চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে দাবানলের মতো।

 বীরত্ব-প্রকাশের নূতন অবসর পাওয়া গেল ব’লে নগরে নগরে বলিষ্ঠ ধুবকরা তরবারি, বর্শা, বাণ ও কুঠার নিয়ে শান দিতে বসেছে বিপুল উৎসাহে; এবং উচ্চকণ্ঠে প্রতিজ্ঞা করছে—একাধিক ভারতশত্রুকে বধ না ক’রে তাদের কেউ প্রাণ দেবে না।

 এক জায়গায় হঠাৎ অশ্ব থামিয়ে সুবন্ধু ব’লে উঠল, “না বন্ধু, না। তোমরা সকলেই যদি প্রাণ দিতে চাও, তাহ’লে ভারতের মঙ্গল হবে না।”

৬৪