জনৈক যুবক সবিস্ময়ে বললে, “দেশের জন্যে আমরা প্রাণ দিতে চাই। প্রাণের চেয়ে বড় কি আছে মহাশয়?”
সুবন্ধু বললে, “পারস্য সম্রাট যখন ভারত আক্রমণ করেছিলেন, তখনো ভারতীয় বীরেরা দলে দলে প্রাণ দিতে পেরেছিল—ভারতে কখনো প্রাণ দেবার জন্যে লোকের অভাব হয় নি। কিন্তু তবু পারস্যের কাছে উত্তর-ভারত পরাজিত হয়েছিল।......তোমরা অন্য প্রতিজ্ঞা করো।”
—“কি প্রতিজ্ঞা?”
—“প্রতিজ্ঞা করো, যুদ্ধজয় না ক’রে, গ্রীকদের ভারত থেকে না তাড়িয়ে কেউ রণক্ষেত্র ত্যাগ করবে না। ভাই, প্রাণ দেওয়া সোজা, কিন্তু যুদ্ধজয় করা বড় কঠিন।”
সুবন্ধু আবার ঘোড়াকে ছুটিয়ে দিলে।
যেতে যেতে আরো দেখলে, বৃদ্ধ শিশু ও নারীর দল নগর ত্যাগ ক’রে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে চলেছে। তাদের সঙ্গে সঙ্গে আছে বিলাসী ধনী, কৃপণ ও কাপুরুষের দলও! সুবন্ধুর দুই চক্ষে জাগল ঘৃণাভরা ক্রোধ! অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মনে মনে বললে, “বিলাসী ধনী, কৃপণ, কাপুরুষ! পৃথিবীর অভিশাপ!”
মাঠে মাঠে দেখলে, দলে দলে চাষা ফসলভরা ক্ষেতের দিকে তাকিয়ে হাহাকারে ভরিয়ে তুলেছে আকাশ-বাতাস!
সুবন্ধুর মন করুণার বেদনায় ভ’রে উঠল। বললে, “হা হতভাগ্য চাষীর দল! এদের না আছে অর্থের শক্তি, না আছে অস্ত্রের শক্তি, না আছে বিদ্যার শক্তি! নাগরিক ধনী আর মহাজনরা এদের রাখে পায়ের তলায়, তবু এরা বিনিময়ে দেয় তাদের ক্ষুধার খোরাক। কঠিন পৃথিবীর শুক্নো ধূলোমাটিকে স্নিগ্ধ সুন্দর ক’রে রচনা করে শ্যামল মহাকাব্য এই দরিদ্র মহাকবির দল। কিন্তু দেশে যখন যুদ্ধ বাধে তখন কি বিদেশী আর কি স্বদেশী সৈন্যেরা চ’লে যায় এদেরই
৬৫