পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

খুব সম্ভব, যুদ্ধক্ষেত্রে রক্তাক্ত তরবারি নাচিয়ে তিনি বীরের কাম্য মৃত্যুকেই বরণ ক’রে নিয়েছিলেন।

 হতভাগ্য দেশ ভারতবর্ষ! এমন এক ঐতিহাসিক বীরের নির্ভীক নিঃস্বার্থ আত্মদানের কাহিনী আমরা একেবারেই ভুলে গিয়েছি। রাজা হস্তী অন্য দেশে জন্মালে যুগে যুগে শত শত কবি ও ঔপন্যাসিকের কল্পনা তাঁর অমর নাম নিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠত। কোথায় দিগ্বীজয়ী সম্রাট আলেকজাণ্ডারের সর্বজয়ী বিরাট বাহিনী, আর কোথায় এক ক্ষুদ্র পার্বত্য রাজা হস্তীর মুষ্টিমেয় সৈন্যদল! পতঙ্গ যেন মাতঙ্গকে একমাস শক্তিহীন ক’রে রেখেছিল! এই আশ্চর্য বীরত্ব-গাথা আমরা শুনতে পেয়েছি কেবল গ্রীক ঐতিহাসিকের মুখেই। কিন্তু ভারতের কেউ তাঁর নাম মনে রাখেনি, অথচ ভারতের নির্ভরযোগ্য সত্যিকার ঐতিহাসিক যুগে সর্বপ্রথম বীর হচ্ছেন মহারাজা হস্তী! তাঁর আগে পঞ্চপাণ্ডব, ভীষ্ম, দ্রোণ ও কর্ণ প্রভৃতি বীরের কথা আমরা শুনি বটে, কিন্তু তাঁরা ঐতিহাসিক যুগের কেউ নন। কবির কল্পনা ব’লে কেউ তাঁদের উড়িয়ে দিলে জোর ক’রে প্রতিবাদ করবার উপায় নেই।

 অভিসারের মহারাজাও পুরুর সঙ্গে যোগ দেবার জন্যে সৈন্য সংগ্রহ করছিলেন, কিন্তু মহারাজা হস্তীর পরিণাম দেখে ভয়ে ভয়ে তিনি আলেকজাণ্ডারের সঙ্গে সন্ধি ক’রে ফেললেন।

 আলেকজাণ্ডার সীমান্তের কোনো রাজাকেই অন্য রাজাদের সঙ্গে মিলে শক্তিবৃদ্ধি করতে দিলেন না, নিজের বৃহত্তর বাহিনী নিয়ে একে একে তাদের প্রত্যেককেই পরাস্ত করলেন। গ্রীক ঐতিহাসিকরা এই সব হিন্দু রাজা ও রাজ্যের নাম করেছেন বটে, কিন্তু বিদেশী ভাষার কবলে প’ড়ে ঐ-সব নাম এতটা বিকৃত হয়েছে যে, সেগুলিকে ভারতীয় নাম ব’লে চেনবার কোনো উপায়ই নেই। বড় বড় পণ্ডিতও এ-কাজে হার মেনেছেন।

৭৪