পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আবার ইতিহাস

 তবে অসংখ্য সৈন্যের অধিকারী হয়েও আলেকজাণ্ডারের ভারতীয় যুদ্ধযাত্রা মোটেই নিরাপদ হয় নি। তিনবার তাঁকে আহত হ’তে হয়েছিল। প্রথম দুইবার ভারতের উত্তর সীমান্তে এবং শেষ-বার মূলতানে—যখন তিনি ভারত-জয়ের আশায় জলাঞ্জলি দিয়ে স্বদেশে প্রস্থান করছিলেন। শেষ-বারের আঘাত এমন সাংঘাতিক হয়েছিল যে, আলেকজাণ্ডারের জীবনের আশাই ছিল না।

 এই তিনবারই আলেকজাণ্ডার হাজার হাজার বন্দীকে হত্যা ক’রে নির্দয় ও অমানুষিক প্রতিশোধ নিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বারের হত্যাকাণ্ডের জন্যে গ্রীক ঐতিহাসিকরা পর্যন্ত তাঁর বিশ্বাসঘাতকতার সমর্থন করতে পারেন নি।

 মাসাগা (সম্ভবত আধুনিক মালাকাণ্ড গিরিসঙ্কটের উত্তরে) নগরে সাতহাজার পেশাদার ভারতীয় সৈন্য ছিল। তারা চাকরির খাতিরে সেখানে গিয়েছিল ভারতের সমতল প্রদেশ থেকে। মাসাগা নগরের পতনের পর তারা যখন আত্মসমর্পণ করে, আলেকজাণ্ডার তাদের আশ্রয় দিয়ে গ্রীক ফৌজে গ্রহণ করতে চান। কিন্তু সেই সাতহাজার হিন্দুবীর একবাক্যে বললে, “আমরা পেশাদার সেপাই বটে, কিন্তু বিদেশীর অধীনে চাকরী নিয়ে স্বদেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে পারবো না। আমরা দেশে ফিরে যাবো।”

 আলেকজাণ্ডার তখন তাদের কিছু বললেন না। কিন্তু রাত্রে তারা যখন স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে নিশ্চিন্ত নিদ্রায় অচেতন হয়ে আছে, তখন হঠাৎ অসংখ্য সৈন্য নিয়ে গোপনে তাদের আক্রমণ করলেন। ঘুম ভাঙবার আগেই তাদের অনেকে বিশ্বাসঘাতকদের তরবারির আঘাতে অনন্ত নিদ্রায় নিদ্রিত হ’ল। বাকি সবাই বিস্ময়ের প্রথম ধাক্কা সামলে নিয়ে পরিবারবর্গকে ঘিরে দাঁড়াল তরবারি হস্তে, সগর্বে! দৃঢ়ম্বরে তারা বললে, “প্রাণ দেবো, তবু দেশের শত্রুর অধীনে চাকরী করবো না!” সেই সাত হাজার হিন্দু বীর সেদিন

৭৫