পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আবার ইতিহাস

সৈন্যসংগ্রহের চেষ্টা করেছিলেন, পূর্ব-উক্ত মাসাগার হত্যাকাণ্ডেই সে প্রমাণ পাওয়া যায়। মাসাগার সাত হাজার বীরের মৃত্যুর একমাত্র কারণ, তারা গ্রীক ফৌজে যোগ দিতে চায় নি। তাদের মতন স্বদেশ-ভক্ত পৃথিবীর সব দেশেই দুর্লভ। সুতরাং এ-কথা জোর ক’রে বলা যায় যে, ভারতের হাজার হাজার পেশাদার সৈন্যও আলেকজাণ্ডারের বাহিনীকে ক’রে তুলেছিল বৃহত্তর। আমাদের মতে, আলেকজাণ্ডার যখন পুরুর সঙ্গে শক্তি পরীক্ষায় অগ্রসর হন, তখন তাঁর অধীনে অন্তত দুই লক্ষের কম সৈন্য ছিল না,—বরং এর উপরে আরো পঞ্চাশ হাজার যোগ করলেও অত্যুক্তি হবে না।

 পুরুর দুর্ভাগ্য! যথাসময়ে প্রস্তুত হ’তে পারেন নি ব’লে তাঁকে একাকীই অন্তত চারগুণ বেশী গ্রীক সৈন্যের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হ’ল। বুদ্ধিমান হ’লে পুরুও অন্যান্য রাজাদের মতন আলেকজাণ্ডারের অধীনতা স্বীকার করতে পারতেন। কিন্তু পুরুর বিরাট বক্ষের তলায় ছিল ভীমার্জুনের আত্মা, বিনা যুদ্ধে তিনি স্বদেশকে যবনের হাতে তুলে দিতে রাজি হ’লেন না।

 পুরু মহাবীর হ’লেও আমাদের এই কাহিনীর নায়ক নন, কাজেই তাঁর কথা সবিস্তারে ব’লে লাভ নেই। কেবল এইটুকু বললেই যথেষ্ট হবে যে, খৃষ্ট-পূর্ব ৩২৬ অব্দে জুলাই মাসের প্রথমে, ঝিলাম নদের তীরে আলেকজাণ্ডারের সঙ্গে যে যুদ্ধে পুরু পরাজিত হন, য়ুরোপীয় ঐতিহাসিকদের মত মেনে তাকে আমরা মহাযুদ্ধ ব’লে স্বীকার করতে পারবো না। পরে পানিপথের একাধিক যুদ্ধে সমগ্র ভারতের ভাগ্য যেমন বার বার পরিবর্তিত হয়েছিল, ঝিলামের যুদ্ধের পরে তেমন কিছুই হয় নি, ভারতবর্ষের অধিকাংশই ছিল আলেকজাণ্ডারের নাগালের বাইরে। তার প্রধান কারণ, পুরু ছিলেন উত্তর-ভারতের মাত্র এক অংশের রাজা, তাঁর পতনের সঙ্গে সমগ্র ভারতের বিশেষ যোগ ছিল না।

৭৭