পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

অটল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তেমনি উদ্ধত ভ্রূকুটিভঙ্গে! কত মহাকাব্য আবৃত্তি করতে পারে ওখানকার প্রতি ধূলিকণা!

 কেবল ব্রিটিশ-সিংহের গর্জন ভেসে এসেছে ভারত-সাগরের ওপার হ’তে। কিন্তু মহাসাগরকে সেকালের ভারতবর্ষ এক হিসাবে কখনো খুব বড় ক’রে দেখেনি—কারণ সমুদ্র-পথ ছিল তারই নিজস্ব দিগ্বিজয়ের পথ। ওপথে বেরিয়েছে সে নিজে দেশে দেশে বাণিজ্য করতে, ধর্মপ্রচার করতে, রাজ্যজয় করতে, উপনিবেশ স্থাপন করতে—কাম্বোডিয়ায়, জাভায় এবং মিশরে! এবং মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া থেকে গ্রীসে ও রোমে! ও-পথে তাকে জয় করবার জন্যে আর কেউ যে আসতে পারে, প্রাচীন ভারতবর্ষের স্বপ্নে এ কাহিনী ছিল না।

 তোমরা কি ভাবছো? আমি গল্প বলছি, না ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করছি? কিন্তু একটু ধৈর্য ধরো। তোমরা ‘অ্যাড্‌ভেঞ্চারে’র কথা শুনতে ভালোবাসো। এবারে যে বিচিত্র ‘অ্যাড্‌ভেঞ্চারে’র কথা বলবো, তা হচ্ছে মহা ভারতের ও মহা গ্রীসের মহা অ্যাড্‌ভেঞ্চার!

 মধ্য-এসিয়া থেকে দক্ষিণ দিকে যখন আর্য অভিযান সুরু হয়, তখন তাদের একদল আসে ভারতবর্ষে, আর একদল যায় পারস্যে। অর্থাৎ ভারতবাসী আর্য আর পারস্যবাসী আর্যরা ছিলেন মূলত একই জাতি। প্রাচীন ভারতের ও প্রাচীন পারস্যের ধর্মের মধ্যেও এই একত্বের যথেষ্ট প্রভাব আবিষ্কার করা যায়। কিন্তু বহু শতাব্দী বিভিন্ন দেশে বাস ক’রে ভারতবাসীরা ও পারসীরা নিজেদের এক-জাতীয়তার কথা সম্পূর্ণরূপে ভুলে গেল।

 আর্য হিন্দুরা বাস করতেন উত্তর-ভারতে। এবং ভারতের দক্ষিণ প্রদেশকে তাঁরা অনার্য-ভূমি ব’লে অত্যন্ত ঘৃণা করতেন। এমন-কি অঙ্গ বঙ্গ কলিঙ্গকেও তাঁরা আমোলে আনতেন না, কোনো নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ এ-অঞ্চলে এলে তাঁকে পতিত ব’লে মনে করা হ’ত।