পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গোড়ার কথা

সেই পুরাণো মনোভাব আজও একেবারে লুপ্ত হয়নি। আজও উত্তরভারতের ব্রাহ্মণরা বাঙালী ব্রাহ্মণদের শ্রদ্ধার চোখে দেখেন না।

 কিন্তু এই ঘৃণিত অনার্য-ভূমি বা পূর্ব-ভারতের বর্ণশঙ্কর ক্ষত্রিয়রাই পরে ধর্মে আর বীরত্বে সারা ভারতের মধ্যে অগ্রগণ্য হয়ে উঠলেন-অদৃষ্টের এমনি পরিহাস! বাঙলাদেশের আশেপাশেই মাথা তুলে দাঁড়াল শিশুনাগ-বংশ, নন্দবংশ, মৌর্যবংশ (যে-বংশে জন্মান চন্দ্রগুপ্তও অশোক), ও গুপ্ত-বংশ প্রভৃতি, খাঁটি আর্য না হয়েও এই-সব বংশের বীরবৃন্দ ক্রমে সমগ্র ভারতবর্ষে সাম্রাজ্য বিস্তার ক’রে ফেললেন।

 ধর্মেও দেখি এই অঞ্চলে খৃষ্ট-পূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে বৌদ্ধমতের আবির্ভাব এবং বুদ্ধদেবও সৎ-ক্ষত্রিয় ছিলেন না।

 এই সময়েই ভারতীয় হিন্দুদের করতলগত পঞ্চনদের তীরে প্রথম বিদেশী শত্রু—অর্থাৎ পারস্যের রাজা প্রথম দরায়ূস মুক্ত তরবারি হাতে ক’রে দেখা দেন। প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ছিল না। সুতরাং আসল ব্যাপারটা কি হয়েছিল জানা যায় না। কিন্তু পারসীরা বলে, তারা ভারতবর্ষ জয় করেছিল। তবে ঐতিহাসিকদের মত হচ্ছে, পারসীরা সিন্ধুনদের তীরবর্তী দেশগুলি ছাড়িয়ে বেশীদূর এগুতে পারেনি! তার বাইরে গোটা ভারতবর্ষের অধিকাংশ প্রদেশে তখন যে-সব পরাক্রান্ত রাজা-রাজড়া বাস করতেন, তাঁদের স্বাধীনতা ও শক্তি ছিল অক্ষুণ্ণ।

 পারসীদের অধীনে যে জনকয়েক করদ ভারতীয় রাজা ছিলেন, এ-বিষয়ে সন্দেহ নেই। কারণ গ্রীসের সঙ্গে যখন পারস্যের শক্তিপরীক্ষা হয় বারংবার, তখন পরবর্তী যুগেও সিন্ধুতটবাসী কয়েকজন ভারতীয় রাজা পারসীদের সাহায্য করবার জন্যে সৈন্য পাঠাতে বাধ্য হয়েছিলেন...

 পট-পরিবর্তন করলেই দেখি, এর পরের দৃশ্য হচ্ছে একেবারে খৃষ্ট-পূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে। ভারতবর্ষে তখন বৈদিক হিন্দুধর্মের