আমাদের থামতে বলছে। কিন্তু দেখছ, ওদের পতাকায় কি আঁকা রয়েছে?”
বসুমিত্র বললে, “পতাকায় আঁকা রয়েছে, ময়ূর!”
—“হাঁ, মৌর্যবংশের নিদর্শন! বসুমিত্র, ওরা মগধের সৈন্য, আমাদের শত্রু! সংখ্যায় ওরা দেখছি অগণ্য। এখন আমাদের পক্ষে এ-স্থান ত্যাগ করাই উচিত।...সৈন্যগণ, পশ্চিম দিকে ঘোড়া ছোটাও।”
সুবন্ধু শূন্যে তরবারি নাচিয়ে হেঁকে বললে, “সে কি শশীগুপ্ত? আমি তো মরতে প্রস্তুত! তোমরা আমাকে বধ করবে না?”
শশীগুপ্ত তার দিকে অগ্নি-উজ্জ্বল দৃষ্টি নিক্ষেপ ক’রে নিজের ঘোড়া চালিয়ে দিলে পশ্চিম দিকে।
বসুমিত্র এক লাফে ঘোড়ার পিঠে উঠে বললে, “সুবন্ধু, এ-যাত্রাও তুই বেঁচে গেলি।”
সুবন্ধু হা-হা ক’রে অট্টহাসি হেসে বললে, “মরতে আমি ভালোবাসি, আমি তো মরতে ভয় পাই না তোদের মতে!! ওরে ভারতের কুসন্তান, ওরে বিশ্বাসঘাতকের দল! স্বদেশের জন্যে প্রাণ দিতেও যে কত আনন্দ, সে কথা তোরা বুঝবি কেমন ক’রে?”
কিন্তু তার কথা তারা কেউ শুনতে পেলে না, কারণ তখন তাদের ঘোড়া ছুটেছে ঊর্ধ্বশ্বাসে।
—“হাঁ সুবন্ধু, ঠিক বলেছ! স্বদেশের জন্যে প্রাণ দেওয়ার মতন আনন্দ আর নেই!”
শত শত ঘোড়ার খুরের আওয়াজ হঠাৎ থেমে গেল সুবন্ধুর কাণের কাছে। চমকে সে ফিরে দেখলে, তার সামনেই তেজীয়ান এক অশ্বের পৃষ্ঠদেশে ব'সে আছেন সহাস্যমুখে চন্দ্রগুপ্ত! সুবন্ধু সবিস্ময়ে তাঁর দিকে ফিরে তাকিয়েই, ভূতলে জানু পেতে ব’সে বিস্মিত স্বরে বললে, “মহারাজা চন্দ্রগুপ্ত! এ যে স্বপ্নেরও অগোচর!”