পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আনন্দে অশ্রুজল

 প্রথম যৌবনের নৃত্যচঞ্চল ভঙ্গিতে এক লাফে ঘোড়ার পিঠ ছেড়ে নীচে নেমে চন্দ্রগুপ্ত বললেন, “রাজবংশে জন্ম বটে, কিন্তু এখনো মহারাজা হ’তে পারি নি, সুবন্ধু।”

 প্রথম সম্ভাষণের পালা শেষ হ’লে পর সুবন্ধু উঠে দাঁড়িয়ে বললে, “কিন্তু মহারাজ, কোথা থেকে দেবদূতের মতন অকস্মাৎ আপনি এখানে এলেন? আপনার সঙ্গে এত সৈন্যই বা কেন? আপনি কি মগধের সিংহাসন অধিকার করেছেন?”

 চন্দ্রগুপ্ত দুঃখিত ভাবে মাথা নেড়ে বললেন, “না সুবন্ধু, মগধের সিংহাসনে বসবার যোগ্যতা এখনো আমার হয় নি। ধন-নন্দের বিপুল বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে আমি পরাজিত হয়েছি।”

 —“হা ভগবান, আমি যে আপনার উপরে অনেক আশা করেছিলুম!”

 —“আশা করেছিলে?”

 —“আজ্ঞে হাঁ মহারাজ! আমি যে মহারাজা পুরুর প্রতিনিধি রূপে বিজয়ী মহারাজা চন্দ্রগুপ্তকে আহ্বান করবার জন্যে মগধে যাত্রা করেছিলুম! পথের মধ্যে আমাকে বন্দী বা বধ করবার জন্যে এসেছিল শশীগুপ্ত —"

 —“তারপর আমাদের দেখে তারা শেয়ালের মতন পালিয়ে গেল? কেমন, এই তো? বুঝেছি। কিন্তু আশ্বস্ত হও সুবন্ধু, একবার পরাজিত হ’লেও আমি হতাশ হই নি! বিশাল মগধসাম্রাজ্য একদিনে জয় করা যায় না। মগধের সিংহাসন অধিকার করবার জন্যেই আমি যাচ্ছি সীমান্তের দিকে!”

 সুবন্ধু বিস্মিত ভাবে চন্দ্রগুপ্তের দিকে তাকিয়ে বললে, “মহারাজ, ক্ষমা করবেন। আপনার কথার অর্থ আমি বুঝতে পারছি না। সীমান্তের দিকে যতই অগ্রসর হবেন মগধের সিংহাসন থেকে তো ততই দূরে গিয়ে পড়বেন!”

৮৯