পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আনন্দের অশ্রুজল

বন্দী হ’তে চায়? আলেকজাণ্ডার আমাদের মহারাজকে বিশ্বাস করেন না। তিনি ভালো ক’রেই জানেন, পুরুষ-সিংহ পুরুর তরবারি গ্রীকদের রক্তপাত করবার আগ্রহে অধীর হয়ে আছে! তাই নিহত নিকানরের জায়গায় তিনি সেনাপতি ফিলিপকে নিযুক্ত ক’রে আদেশ দিয়েছেন যে, মহারাজা পুরুর উপরে তীক্ষ্ণদৃষ্টি রাখতে। গ্রীকদের দাসত্ব করা মহারাজার পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠেছে। কিন্তু তিনি একা কি করতে পারেন? উত্তর-ভারত ছেয়ে গেছে গ্রীকে গ্রীকে। ভারতের সোনার ভাণ্ডার লুণ্ঠন করবার জন্যে নিত্য নূতন গ্রীক এসে এখানে বাসা বাঁধছে! তারা খেলার পুতুলের মতন নাচাচ্ছে তক্ষশীলা আর অভিসারের রাজাকে। তাঁরা যবনদের সেবা ক’রেই খুসি হয়ে আছেন! কিন্তু উত্তর-ভারতের অন্যান্য ছোট ছোট রাজারা বিদ্রোহের জন্যে প্রস্তুত —কেউ কেউ ইতিমধ্যেই বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। তবে এ বিদ্রোহ সফল হবে না, যদি কোনো নেতা এসে সবাইকে একতার বাঁধনে বাঁধতে না পারে।”

 চন্দ্রগুপ্ত আচম্বিতে তাঁর অসি কোষমুক্ত ক’রে ঊর্ধ্বে তুলে পরিপূর্ণ স্বরে বললেন, “তাহ’লে নেতার পদ গ্রহণ করবো আমি সুবন্ধু, আমি নিজেই! আলেকজাণ্ডারকে আমি দেখাতে চাই, ভীমার্জুনের স্বদেশে আজও বীরের অভাব হয় নি!”

 সুবন্ধু বিষণ্ন ভাবে মাথা নেড়ে বললে, “জানি মহারাজ, ভারতে আপনার মতো দু-চারজন বীরের তরবারিতে এখনো মর্চে পড়েনি! কিন্তু দু’চারজনের তরবারি কি ভারতের শৃঙ্খল ভাঙতে পারবে?”

 চন্দ্রগুপ্ত প্রান্তরের পূর্বদিকে অসি খেলিয়ে দৃঢ়স্বরে বললেন, “দু-চারজন বীর নন সুবন্ধু, ওদিকে দৃষ্টিপাত করো! আমি পরাজিত বটে, কিন্তু আজ আর সম্বলহীন নই! চেয়ে দেখো, আমি কত বীর নিয়ে ভারতকে স্বাধীন করতে চলেছি!”

৯১