পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চনদের তীরে

 মৃদু হাস্যে ওষ্ঠাধর রঞ্জিত ক’রে চন্দ্রগুপ্ত বললেন, “ঠিক কথা। গুরু বিষ্ণুগুপ্ত (চাণক্য) একটি চমৎকার উপমা দিয়ে আমার প্রথম বিফলতার কারণ বুঝিয়ে দিয়েছেন। শিশুর সামনে এক থালা গরম ভাত ধ’রে দাও। শিশু বোকার মতো গরম ভাতের মাঝখানে হাত দিয়ে হাত পুড়িয়ে ফেলবে। কিন্তু সে যদি বুদ্ধিমানের মতো ধার থেকে ধীরে ধীরে ভাত ভাঙতে সুরু করে, তাহ’লে তার হাত পুড়বে না। তাই গুরুদেবের সঙ্গে পরামর্শ ক’রে আমি স্থির করেছি, সীমান্ত থেকে রাজ্যের পর রাজ্য জয় করতে করতে ধীরে ধীরে অগ্রসর হবো পাটলিপুত্রের দিকে। আমি নির্বোধ, তাই প্রথমেই রাজধানী আক্রমণ করতে গিয়ে শত্রুদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পড়েছিলুম।”

 সুবন্ধু উৎফুল্ল কণ্ঠে ব’লে উঠল, “মহারাজা চন্দ্রগুপ্তের জয় হোক! মহাপুরুষ বিষ্ণুগুপ্ত ঠিক পরামর্শ দিয়েছেন! তাহ’লে প্রথমেই আপনি কোথায় যাবেন স্থির করেছেন?”

 —“পঞ্চনদের দেশে সব-চেয়ে শক্তিশালী পুরুষ হচ্ছেন মহারাজা পুরু। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, একবার পরাজিত হ’লেও মহারাজ। পুরু স্বাধীন হবার সুযোগ কখনো ত্যাগ করবেন না। আমি প্রথমেই তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করবো।”

 —“আপনি প্রার্থনা করবেন কি, আপনার সাহায্য প্রার্থনা করবার জন্যেই তো মহারাজা পুরু আমাকে মগধে যেতে আদেশ দিয়েছেন! মহারাজের বিশ্বাস, মগধের রাজা এখন আপনি।”

 —“তবেই তো সুবন্ধু, তুমি যে আমায় সমস্যায় ফেললে! মহারাজা পুরু যখন শুনবেন, যুদ্ধে আমি পরাজিত, তখন আর কি আমার সঙ্গে যোগ দিতে ভরসা করবেন?”

 সুবন্ধু উত্তেজিত স্বরে ব’লে উঠল, “ভরসা করবেন না? তাহ’লে আপনি চেনেন না মহারাজ পুরুকে! সিংহ কবে শৃঙ্খলে

৯০