পাতা:পঞ্চনদের তীরে - হেমেন্দ্রকুমার রায়.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিশ্বাসঘাতকের মৃত্যুফাদ

 হঠাৎ প্রধান প্রবেশ-পথ থেকে প্রহরীরা সসম্ভ্রমে দুই পাশে স’রে গেল এবং সভার মধ্যে ধীরচরণে গম্ভীর মুখে প্রবেশ করলেন এক শীর্ণদেহ গৌরবর্ণ ব্রাহ্মণ! তাঁরমুণ্ডিত মস্তক, উন্নত প্রশস্ত ললাট, দুই চক্ষু বিদ্যুত-বর্ষী, গোঁফ-দাড়ী কামানো, ওষ্ঠাধর দৃঢ়-সংবদ্ধ, পরিধানে পট্টবস্ত্র ও উত্তরীয়, পায়ে কাষ্ঠ-পাদুকা। তাঁর ভাব-ভঙ্গি এমন অসাধারণ ব্যক্তিত্বময় যে, তাঁকে দেখলেই মাথা যেন আপনি নত হয়ে পড়ে। ইনিই হচ্ছেন ভারতের চিরস্মরণীয় চাণক্য (কৌটীল্য বা বিষ্ণুগুপ্ত)!

 সভাস্থ সকলেই ভূমিতলে দণ্ডবৎ হয়ে প্রণাম করলেন। হাত তুলে সকলকে আশীর্বাদ ক’রে চাণক্য অগ্রসর হয়ে চন্দ্রগুপ্তের পাশের আসনে গিয়ে বসলেন।

 একবার সভার চারিদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিপাত ক’রে চাণক্য বললেন, “চন্দ্রগুপ্ত, তুমি আজ আমায় আবার সভায় আহ্বান করেছ কেন?”

 চন্দ্রগুপ্ত বললেন, “গুরুদেব, আজ একমাস ধ’রে আমরা অলস হয়ে এখানে ব’সে আছি!”

 চাণক্যের দুই ভূরু সঙ্কুচিত হ’ল। কিন্তু তিনি শান্ত স্বরেই বললেন, “জানি চন্দ্রগুপ্ত। একমাস কেন, দরকার হলে আমাদের দুই মাস ধ’রে এইখানেই ব’সে থাকতে হবে। সুবন্ধু এখনো পুরুর কাছ থেকে ফিরে আসেনি!”

 চন্দ্রগুপ্ত বললেন, “কিন্তু সুবন্ধু যখন এতদিনেও ফিরল না, তখন আমার সন্দেহ হচ্ছে যে মহারাজা পুরু নিজের মত পরিবর্তন করেছেন!

 চাণক্য গম্ভীর স্বরে বললেন, “না! তাহ’লেও সুবন্ধু এতদিনে ফিরে এসে আমাদের সে-খবর দিত। আমার বিশ্বাস, মহারাজা পুরু ভালো ক’রে প্রস্তুত হচ্ছেন ব’লেই সুবন্ধু এখনো অপেক্ষা করছে। পুরুর চারিদিকেই সতর্ক গ্রীকদের পাহারা, তার মধ্যে

৯৫