বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আয়ু উৎসর্গ করিয়া গিয়াছেন—সেই দেশবাসীরা আজ তাঁহার শোকে অবসন্ন। কিন্তু বাঙ্গলার যে সব তরুণ প্রাণ তাহাদের ক্ষুদ্র জীবনের যৎকিঞ্চিৎ সম্পদ উৎসর্গ করিয়া তাঁহার উদ্ধৃত পতাকার তলে সমবেত হইয়াছিল—যাহারা সুখে দুঃখে আঁধারে আলোয় তাঁহার আদেশবাণী অনুসরণ করিয়াছে—সংগ্রামে প্রবৃত্ত হইয়া যাহারা কখনও বিজয়-গৌরবে গৌরবান্বিত হইয়াছে, কখনও বা কারার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হইয়াছে—নৈরাশ্যের রজনীতে অথবা সফলতার প্রভাতে যাহারা কখনও তাঁহার পার্শ্ব ছাড়ে নাই—যাহারা তাঁহার মধ্যে পিতা সখা ও গুরুর অপূর্ব্ব সমাবেশ পাইয়াছিল—আজ সেই সব তরুণ প্রাণের অবস্থা কি কথায় বর্ণনা করা যায়?

 দেশবন্ধু গিয়াছেন। যশোরশ্মিমণ্ডিত পূর্ণরবির ন্যায় তিনি জীবন-মধ্যাহ্নেই অস্ত গিয়াছেন। সিদ্ধিদাতার বরপুত্র তিনি বিজয়মুকুট পরিয়াই ভারতের বিশাল কর্ম্মক্ষেত্র হইতে দিব্যলোকে যাত্রা করিয়াছেন। অত্যন্ত ত্যাগের মধ্য দিয়া তিনি আজ অমৃতত্ব লাভ করিয়াছেন। কিন্তু আজ আমাদের বাহিরে তিমির, অন্তরে শূন্যতা। যতদূর দৃষ্টি যায় কেবল মেঘের পর মেঘ জমাট বাঁধিয়া রহিয়াছে; সে তিমির-প্রাচীরের মধ্যে আলোক প্রবেশের তিলার্দ্ধ স্থানও নাই।

 আর একদিনের কথা মনে পড়ে—যেদিন বাঙ্গলার আকাশ ঘন ঘটায় আচ্ছন্ন, বাঙ্গলার বীরকেশরী কারাগৃহে নিক্ষিপ্ত। সেদিন নৈরাশ্যের আঁধার ভেদ করিয়া এক অপূর্ব্ব মোহনীয় মূর্ত্তি বরাভয়হস্তা মহাশক্তিরূপে বাঙ্গলার কর্ম্মক্ষেত্রে অবতীর্ণ হইয়াছিল। সেদিন বাঙ্গালী আপনার স্বরূপ চিনিয়াছিল; সেদিন বাঙ্গালী আপনাকে শুধু দেশনায়িকা নয়—দেশমাতৃকার আসনে বসাইয়াছিল। সেই গৌরবের, সেই আনন্দের, সেই উন্মাদনার দিন বাঙ্গলা ভুলে নাই, ভুলিতে পারে না। সেদিন বাঙ্গালী আপনাকে যে ভক্তি শ্রদ্ধা ও মানের সিংহাসনে বসাইয়াছিল, আজও বাঙ্গালীর হৃদয়ে আপনার সেই সিংহাসন অটুট রহিয়াছে। সেদিন হইতে আপনি শুধু চিররঞ্জন মাতা নন,—আপনি বঙ্গমাতা।

১৪৭