পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/২৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ফুলের গাছগুলি বাড়ছে না দেখে তিনি নান বৈজ্ঞানিক উপায় অবলম্বন করেছেন। আজ এক সপ্তাহ হ’ল তিনি রোদের মধ্যে একটা বড় আর্শি রেখে ফুলের গাছগুলির উপর সূর্য্যের আলো কয়েক ঘণ্টা করে ফেলছেন। তাঁর মতে এই উপায়ের দরুন ফুলের গাছগুলি খুব তাড়াতাড়ি এখন বাড়ছে। আমরা তাই এখন তাঁকে “দ্বিতীয় জগদীশ বোস্” সাব্যস্ত করেছি।

 জেলখানা যে একটা চিড়িয়াখানা সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নাই। আমাদের এখানে একটি লোক আছে তার নাম শ্যামলাল। তার বুদ্ধির পরিচয় পেয়ে আমরা প্রথমে তাকে “পণ্ডিত” উপাধি দিয়েছি। সম্প্রতি আরও বুদ্ধির পরিচয় পেয়ে তাকে “উপাধ্যায়” দেওয়া হয়েছে এবং তাকে ভরসা দেওয়া হয়েছে যে ক্রমশঃ “মহামহোপাধ্যায়” উপাধি পাবে।

 শ্যামলাল মহাপ্রভু ডাকাতি করতে গিয়ে পাঁচ টাকা নিয়ে ঘরে ফেরেন। হাজারের বেশী টাকা তার ডাকাত বন্ধুরা তাকে ঠকিয়ে নিয়ে যায়। পাঁচ টাকার জন্য সে পেল ১৫ বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড। তাকে পাঠান হ’ল রাজশাহী জেলে। সেখানে কয়েদীরা জেল ভেঙ্গে পালাল। যখন সব কয়েদীরা পালাল তখন শ্যামলাল দেখল যে জেলখানা খালি এবং সদর দরজা খোলা। সে গিয়ে জমাদারকে বললে——“জমাদার সাহেব, আমিও কি যেতে পারি?” জমাদার উত্তর দিল, “তুমরা যেযা খুসী করো”। যখন সব কয়েদীরা ধরা পড়ে আবার জেলে এলো—তাদের বিচার আরম্ভ হ’ল। বিচারের সময় শ্যামলাল দাঁড়িয়ে উঠে বল্লে, “হুজুর আমি জমাদারের অনুমতি নিয়ে জেলের বাহিরে গিছলুম।” জজ তার কথা শুনলে না—সে পেলো এক বৎসর সশ্রম কারাদণ্ড—জেলভাঙ্গার অপরাধে।

 এখানে এসে শ্যামলালকে দেওয়া হ’ল স্নানের ঘরের কাজ। তার কাজ জল ঠিক রাখা—কাপড়, তেল, সাবান ঠিক রাখা ইত্যাদি। পাঁচজন কয়েদী এসে স্নানের জল নষ্ট করে দেখে সে মনে মনে

২১১