পাতা:পত্রাবলী (১৯১২-১৯৩২) - সুভাষচন্দ্র বসু.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কারণ আমি এর জন্য কামনা করিয়াছিলাম—কামনা করিয়াছিলাম আমার জন্য নহে কারণ আমার আবার টাকার প্রয়ােজন কেন—আমি টাকাকে বড় ভয় করি কারণ টাকাই যত অনর্থের কারণ। আমার কামনাটা নিজের জন্য নহে—আমি প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলাম—বৃত্তির একটি পয়সাও আমার জন্য ব্যয় করিব না—সমস্তটা পরার্থে ব্যয় করিব—এবং আমি আশা করি যে সে প্রতিজ্ঞা পালন করিব। তবে এত উঁচু স্থান আমি কি করিয়া পাইলাম তাহা আমি ভাবিয়াও স্থির করিতে পারি নাই। পরীক্ষার পূর্ব্বে এক প্রকার পড়ি নাই বলিলে চলে—আর বহু পূর্ব্ব হইতে লেখাপড়া কম করিয়াছিলাম। আমি স্থির জানি—আমি এ স্থানের উপযুক্ত নহি—আমার বিশ্বাস ছিল আমি সপ্তম হইব। আমি যদি না পড়িয়া এ স্থান পাই তবে যাহারা লেখা পড়াকে উপাস্য দেবতা মনে করিয়া তজ্জন্য প্রাণপাত করে তাহাদের কি অবস্থা হয়? তবে প্রথম হই আর লাষ্ট্ হই আমি স্থির রূপে বুঝিয়াছি লেখাপড়া ছাত্রের প্রধান উদ্দেশ্য নহে—বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘চাপ্রাস্’ পাইলে ছাত্রেরা আপনাকে কৃতার্থ মনে করে —কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘চাপ্রাস’ পাইলেও যদি কেহ প্রকৃত জ্ঞান না লাভ করিতে পারে—তবে সে শিক্ষাকে আমি ঘৃণা করি। তাহা অপেক্ষা মূর্খ থাকা কি ভাল নয়? চরিত্র গঠনই ছাত্রের প্রধান কর্ত্তব্য—বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা চরিত্র গঠনকে সাহায্য করে—আর কার কিরূপ উন্নত চরিত্র তাহা কার্য্যেই বুঝিতে পারা যায়। কার্য্যই জ্ঞানের পরিচায়ক। বই-পড়া বিদ্যাকে আমি সর্ব্বান্তঃকরণে ঘৃণা করি। আমি চাই চরিত্র—জ্ঞান—কার্য্য। এই চরিত্রের ভিতরে সব যায় ভগবদ্ভক্তি, স্বদেশপ্রেম,—ভগবানের জন্য তীব্র ব্যাকুলতা—সবই যায়। বই পড়া বিদ্যা ত অতি তুচ্ছ সামান্য জিনিস—কিন্তু হায়! কত লােকে তাহা লইয়া কত অহংকার করিয়া থাকে!

 কটকে পড়িলে কতকগুলি সুবিধা আছে আর কলিকাতায় পড়িলেও কতকগুলি সুবিধা আছে। কোথায় পড়িব তাহা ঠিক

২৭