পাতা:পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আপনার কি?

 ভারতী কহিল, আপনার বেগার খেটে বেড়ানোই আমার একমাত্র জরুরী কাজ নাকি? আমাকেও দুটি রেঁধে খেতে হয়। ঘুমুতে না পারেন আমার সঙ্গে নীচে চলুন। আমি কি কি রাঁধি, কেমন করে রাঁধি দেখবেন। হাতে যখন একদিন খেতেই হবে তখন একেবারে অনভিজ্ঞ থাকা ভাল নয়। এই বলিয়া সে সহসা খিল খিল্ করিয়া হাসিয়া উঠিল।

 অপূর্ব্ব কহিল, আমি মরে গেলেও আপনার হাতে খাবো না।

 ভারতী বলিল, আমি বেঁচে থেকে খাবার কথাই বলচি। এই বলিয়া সে হাসিমুখে নীচে নামিরা গেল।

 অপূর্ব্ব ডাকিয়া কহিল, আমি তাহলে এখন বাসাই যাই,—তেওয়ারী বেচারা ভেবে সারা হয়ে যাচ্চে। এই বলিয়া সে কিয়ৎকাল জবাবের জন্য উৎকর্ণ হইয়া থাকিয়া অবশেষে হেলান দিয়া শুইয়া পড়িল। হয়ত, সে শুনিতে পায় নাই, হয়ত, শুনিয়াও উত্তর দেয় নাই, কিন্তু ইহাই বড় সমস্যা নয়; বড় সমস্যা এই যে, তাহার অবিলম্বে বাসায় যাওয়া উচিত। কোন অজুহাতেই আর দেরি করা সাজে না। অথচ, ভিতর হইতে যাওয়ার তাগিদ যতই অনুভব করিতে লাগিল, ততই কিন্তু দেহ যেন তাহার অলস শিথিল হইয়া আসিতে লাগিল। শেষকালে সেই বড় চেয়ারের উপরেই মুখের উপর হাত চাপা দিয়া অপূর্ব্ব ঘুমাইয়া পড়িল।


১৫

 বেলা যে যায়! উঠুন!

 অপূর্ব্ব চোখ রগড়াইয়া উঠিয়া বসিল। দেওয়ালের ঘড়ির প্রতি চাহিয়া কহিল, ইস্! তিন-চার ঘণ্টার কম নয়। আমাকে তুলে দেননি কেন? বাঃ—মাথায় একটা বালিশ পর্য্যন্ত কখন দিয়ে দিয়েছেন। এতে কি আর কারও ঘুম ভাঙে!

 ভারতী কহিল, ঘুম ভাঙবার হ’লে তখনি ভাঙতো। এটা না দিলে মাঝে থেকে ঘাড়ে শুধু একটা ব্যথা হোতো। যান, মুখ-হাত ধুয়ে আসুন, সরকারমশায় জলখাবারের থালা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর ঢের কাজ, একটু চট্ করে তাঁকে ছুটি দিন।

 দ্বারের বাহিরে যে লোকটি দাঁড়াইয়াছিল, মুখ বাড়াইয়া সে তাহার ত্বরা নিবেদন করিল।

১২৯