পাতা:পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 হীরা সিং ইঙ্গিতে সুমিত্রাকে দেখাইয়া দিল, ডাক্তার হাত বাড়াইয়া বলিলেন, পিস্তলটা দেখি সুমিত্রা!

 সুমিত্রা বেল্ট হইতে খুলিয়া পিস্তলটা ডাক্তারের হাতে দিলেন। ডাক্তার জিজ্ঞাসা করিলেন, আর কারও কাছে পিস্তল কিংবা রিভলবার আছে?

 আর কাহারও কাছে ছিল না তাহা সকলেই জানাইল। তখন সুমিত্রার পিস্তল নিজের পকেটের মধ্যে রাখিয়া ডাক্তার একটুখানি হাসিয়া কহিলেন, সুমিত্রা, তুমি বললে, ডেথ্ সেনণ্টেন্স আমরা দিলাম। কিন্তু ভারতী ত দেয়নি।

 সুমিত্রা এক মুহূর্ত্ত ভারতীর মুখের প্রতি চাহিয়া দৃঢ় কণ্ঠে কঠিল, ভারতী দিতে পারে না।

 ডাক্তার বলিলেন, পারা উচিতও নয়। তাই না ভারতী?

 ভারতী কথা কহিল না, এই কঠিনতম প্রশ্নের উত্তরে সে শুধু উপুড় হইয়া পড়িয়া ডাক্তারের ক্রোড়ের মধ্যে মুখ লুকাইল।

 ডাক্তার তাহার মাথার উপর একটা হাত রাখিয়া কহিলেন, অপূর্ব্ববাবু যা করে ফেলেচেন সে আর ফিরবে না—তার ফলাফল আমাদের নিতেই হবে। শাস্তি দিলেও হবে, না দিলেও হবে। কিন্তু আমি বলি তাতে কাজ নেই—ভারতী এঁর ভার নিন। এই দুর্ব্বল মানুষটিকে একটু মজবুত করে গড়ে তুলুন। কি বল সুমিত্রা?

 সুমিত্রা কহিলেন, না!

 সকলে একসঙ্গে বলিয়া উঠিল, না।

 সেই কুদর্শন লোকটাই সর্ব্বাপেক্ষা অধিক আস্ফালন করিল। সে তাহার থাবা যুগল শূন্যে তুলিয়া ভারতীকে ইঙ্গিত করিয়াই কি একটা বলিয়া ফেলিল।

 সুমিত্রা কঠিন-কণ্ঠে কহিলেন, আমরা সকলে একমত। এতবড় অন্যায় প্রশ্রয়ে আমাদের সমস্ত ভেঙে-চুরে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাবে।

 ডাক্তার বলিলেন, যদি যায় ত উপায় কি?

 সুমিত্রার সঙ্গে সঙ্গেই সাত-জন গর্জ্জিয়া উঠিল, উপায় কি? দেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য, আমরা কিছুই মানবো না। আপনার একার কথায় কিছুই হতে পারবে না।

 গর্জ্জন বাহিলে ডাক্তার উত্তর দিলেন। এবার তাঁহার কণ্ঠস্বর আশ্চর্য রকমের শান্ত ও মৃদু শুনাইল। তাহাতে উৎসাহ বা উত্তেজনার বাষ্পও ছিল না, বলিলেন, সুমিত্রা, বিদ্রোহে প্রশ্রয় দিয়ো না। তোমরা ত জানো, আমার একার মত তোমাদের একশ জনের চেয়েও বেশি কঠিন। সেই ভয়ঙ্কর লোকটাকে সম্বোধন

১৭৭