পাতা:পথের দাবী - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ট্রেনের সময় হইতে রামদাস বিদায় গ্রহণ করিল। কি জানি তেওয়ারীর নালিশ ও তাহার মনিবের মুখের চেহারায় সে কিছু অনুমান করিয়াছিল কি-না, যাইবার সময় সহসা প্রশ্ন করিল, বাবুজী, এ বাসায় কি আপনার সুবিধা হচ্ছে না?

 অপূর্ব্ব ঈষৎ হাসিয়া কহিল, না। এবং রামদাস জিজ্ঞাসুমুখে চাহিয়া আছে দেখিয়া কহিল, উপরে যাঁরা আছেন আমার সঙ্গে বড় সদয় ব্যবহার করছেন না।

 রামদাস বিস্ময়াপন্ন হইয়া বলিল, ওই মহিলাটি?

 হাঁ, ওর বাপ ত বটেই। এই বলিয়া অপূর্ব্ব কাল বিকালে ও আজ সকালের ঘটনা বিবৃত করিল। রামদাস কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া কহিল, আমি হলে এর ইতিহাস আর এক রকম হোতো। ক্ষমা প্রার্থনা না কোরে এই দরজা থেকে সে এক পা নীচে নামতে পারত না।

 অপূর্ব্ব কহিল, ক্ষমা না চাইলে কি করতেন!

 রামদাস কহিল, এই যে বললুম, নামতে দিতাম না।

 অপূর্ব্ব কথাটা যে তাহার বিশ্বাস করিল তাহা নয়, তবুও সাহসের কথায় একটু সাহস পাইল। সহাস্যে কহিল, কিন্তু এখন আমরা ত নামি চলুন, আপনার গাড়ির সময় হয়ে যাচ্ছে। এই বলিয়া সে বন্ধুর হাত ধরিয়া সিঁড়ি বাহিয়া নীচে নামিতে লাগিল। কিন্তু আশ্চর্য্য এই যে, আসিবার সময় যেমন, যাইবার সময়েও ঠিক তেমনি সিঁড়ির মুখেই সেই মেয়েটির সহিত দেখা হইল। হাতে তাহার ছোট একটি কাগজের মোড়ক, বোধ করি কিছু কিনিতে গিয়াছিল, ফিরিয়া আসিতেছে! তাহাকে পথ দিবার জন্য অপূর্ব্ব একধারে সরিয়া দাঁড়াইল, কিন্তু হঠাৎ হতবুদ্ধি হইয়া দেখিল, রামদাস পথ না ছাড়িয়া একেবারে সেটা সম্পূর্ণ রোধ করিয়া দাঁড়াইয়াছে। ইংরেজি করিয়া কহিল, আমাকে এক মিনিট মাপ করতে হবে, আমি এই বাবুজির বন্ধু। এদের প্রতি দুর্ব্যবহারের জন্য আপনাদের অনুতপ্ত হওয়া উচিত।

 মেয়েটি চোখ তুলিয়া ক্রুদ্ধস্বরে কহিল, ইচ্ছা হয় এ সব কথা আমার বাবাকে বলতে পারেন।

 আপনার বাবা বাড়ি আছেন?

 না।

 তাহলে অপেক্ষা করবার আমার সময় নেই। আমার হয়ে তাঁকে বলবেন যে, তাঁর উপদ্রবে ইনি থাকতে পারচেন না।

 মেয়েটি তেমনি তিক্তকণ্ঠে কহিল, তাঁর হয়ে আমিই জবাব দিচ্ছি যে ইচ্ছে করলে ইনি চলে যেতে পারেন।

 রামদাস একটু হাসিল, কহিল, ভারতবর্ষীয় ক্রীশ্চান ‘বুলি’দের আমি চিনি

২৭