পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পদাবলী-মাধুর্য্য
৯৯

 এই গীতে আবার সেই স্পষ্ট ইঙ্গিত। গোবিন্দ দাসের চক্ষের সম্মুখেই কত কুবের-তুল্য ধনাঢ্য ব্যক্তি, কত রাজপুত্র কৃষ্ণপ্রেমে সর্ব্বস্ব ত্যাগ করিয়া, দুর্গম পথের কষ্ট শিরোধার্য্য করিয়া, ঘর ছাড়িয়া চলিয়া গিয়াছেলেন, সে ছিল বাঙালার ত্যাগ-ধর্ম্মের সুবর্ণ-যুগ। সুতরাং গোবিন্দ দাসের কবিতা কল্পনালোকের কথা নহে, সেই অধ্যাত্ম-কল্প-লোকেরই কথা। কৃষ্ণ যমুনাতীরে আছেন, কিম্বা রাধাকুণ্ডের তীরে আছেন, সে সকল মামুলী কথা তিনি বলেন নাই। তিনি ধ্যানলোকে বসিয়া, সমস্ত লৌকিক সংস্কার ও কবিপ্রসিদ্ধির এলাকা ছাড়িয়া দিয়া বলিয়াছেন—“হরি রহু মানস-সুরধুনী-পার” এবং রাধাকে বলিতেছেন, “তুমি কেন অভিসার করিয়া মরিবে?—তাঁহাকে পাইবে না (“সুন্দরী কাহে করবি অভিসার”)!” কেবলই অধ্যাত্ম-তথ্যের ইঙ্গিত দিয়া তিনি কাব্যের মর্যাদা ক্ষুন্ন করেন নাই, কবিদের পথেই চলিয়াছেন—

‘‘তাহে অতি দূরতর বাদল-দোল,
বারি কি বারই নীল নিচোল।’’

বর্ষার অবিরত বৃষ্টিপাতে দূর-প্রসারিত অরণ্যের রেখা পর্য্যন্ত দোল খাইতেছে। তুমি কি এই ক্ষীণ নীল শাড়ীর আঁচল দিয়া সেই বাদলের বেগ নিবারণ করিতে পারিবে?

 ইহার পরে গোবিন্দ দাসের অভিসারের আর একটি পদ উদ্ধৃত করিব, তাহা একেবারেই মর্ত্ত্যেলোকের কথা নহে। তন্ত্রোক্ত শব-সাধনা, যেখানে সাধক শবের উপর বসিয়া তপস্যা করেন—পঞ্চাগ্নিকের দুশ্চর প্রচেষ্টা, যেখানে তিনি গ্রীষ্মকালে চারিদিকে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুণ্ডের দুঃসহ তাপ সহ্য করিয়া পঞ্চম অগ্নি-স্বরূপ মধ্যাহ্নের প্রখর মার্ত্তণ্ডের দিকে বন্ধদৃষ্টি হইয়া থাকেন—শত কল্পারূঢ় যোগীর নিশ্চল আসন, যেখানে তিনি অনাহারে অনিদ্রায় তপশ্চরণ করেন—এই পদোক্ত প্রেমিকের