শালায় কত সহস্র, কত কোটী বৃহৎ যন্ত্র কাজ করিতেছে; আবার একটি জীবাণুর শরীরেও সূক্ষ্ম শিরা, উপশিরা তেমনই পূর্ণভাবে ক্রিয়াশীল—ক্ষুদ্র বলিয়া তাহার আভ্যন্তরীণ সূক্ষ্ম যন্ত্রগুলির কোনটিই অপূর্ণ বা অঙ্গহীন নহে। সেই বহুরূপী বিরাট্ পুরুষবর আমার কাছে আমারই মত হইয়া আসেন। ভগবানের এই সর্ব্বব্যাপক, সূক্ষ্ম ও স্থূল উভয়ের উপযোগী, বৈষম্যহীন রূপভেদ স্বীকার করিলে মান-লীলা, দান-লীলা, নৌকা-বিলাস বুঝিতে কষ্ট হইবে না। এক সাধু আমাকে বলিয়াছিলেন—“রাধা-কৃষ্ণ লীলা দেখিবে? সৌর-কেন্দ্রে সূর্য্য তাঁহার জ্যোতিষ্কমণ্ডলীকে লইয়া কতই খেলা করিতেছেন—তাহাদিগকে অনুরাগের বন্ধনে বাঁধিয়া কখনও কাছে আনিয়া, কখনও দূরে রাখিয়া ঋতুভেদে লীলা করিতেছেন—আমার কাছে ইহাই রাধাকৃষ্ণের লীলা। আবার একটি ক্ষুদ্র ফুলকে লইয়া ভ্রমর কত কথাই না গুঞ্জন করিয়া বলিতেছে—কখনও ফুলটি নতমুখে তাহা শুনিতেছে, কখনও ঘাড় নাড়িয়া ভ্রমরটিকে ‘যাও, যাও’ বলিয়া সরাইয়া দিতেছে—আমার কাছে ইহাই রাধাকৃষ্ণের লীলা। প্রেমের অঞ্জন চক্ষে পরিয়া এস, দেখিবে জগৎ ব্যাপিয়া এক অফুরন্ত লীলা চলিতেছে; গাছে গাছে, পল্লবে পল্লবে, নদীতে ও সিন্ধুতে গ্রহ-উপগ্রহে—সকলেই ভালবাসায় ধরা দিয়াছে—ইহাই নিত্যবৃন্দাবনের নিত্য উৎসব।”
এই জগৎকে প্রেরণা দিতেছে বাসনা। খাদ্য, আশ্রয়, ধন, মান, বিদ্যা, প্রতিষ্ঠা, ঐশ্বর্য্য, ক্ষমতা ইত্যাদির লোভে মানুষ সারাজীবন প্রতিনিয়ত প্রবৃত্তির পথে ঘুরিতেছে। কাম্যলাভের ব্যপদেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ঝগড়া বিবাদ ও লড়াই চলিতেছে। এই কাম্যের পাছে পাছে দিবারাত্র খুনোখুনি ব্যাপার—উহা এবিসিনিয়া বা কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধই হউক, বা সামান্য জ্ঞাতিঘটিত মোকদ্দমাই হউক। কিন্তু যে